পাতা:আজকের আমেরিকা.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজকের আমেরিকা
৫১

 কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস লেগে কান দুটা অবশ হয়ে আসছিল। আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল মাঝে মাঝে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি এসে মাথায় পড়ছিল। তবুও নাবিকের দল সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল রাজাকে সম্মান দেখাতে। আমেরিকান, ইতালিয়ান, জার্মান সকলেই টুপি খুলে দাঁড়িয়েছিল। সকলেই বলছে, ওই বুঝি রাজার ক্রুজার আসছে। খালি চোখে দৃষ্টি বেশী দূর যায় না। এ আকাশ আমাদের দেশের আকাশ নয়। এ হল বেস্‌কে উপসাগরের আকাশের এক অংশ। কখন কিরূপ থাকে, তার কোনই ঠিক নাই। কখনও শান্ত, কখনও গম্ভীর, আর কখনও বা পাগল হয়ে মাতলামি শুরু করে। আকাশের নীচের সাগরও সেই রকমই। যার মায়া নাই, শুধু বিরাট তরংগমালা।

 কতক্ষণ পর একটা বড় ক্রুজার প্রবল বেগে আমাদেরই জাহাজের কাছ ঘেঁসে চলে গেল। তীর হতে কামান গর্জে উঠল। তারপর আর একখানা ক্রুজার, তারপর রাজার জাহাজ, তারপর আর একখানা ক্রুজার তীরের মত চলে গেল। আমাদের জাহাজের মাঝিমাল্লা নাবিক সকলেই নমস্কার জানাল। যাত্রীর দল নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। আমি দর্শকমাত্র। কাজেই আমার দিকে কেউ চেয়ে নেই বলেই আমি মনে করছিলাম কিন্তু হঠাৎ দেখলাম, সকলে আমারই দিকে চেয়ে আছে। ভাবলাম যদি এটা কলকাতা হত, তবে আজ এত কাছে দাঁড়ানো ত দূরের কথা, হয়ত আমাকে ঘরে বন্ধ করে পুলিশ পাহারায় রাখা হ’ত। আমার জীবনে এরকম ব্যাপার ঘটেছে দুবার। কিন্তু এটা রাজার নিজের দেশে সেজন্যই আমার সে দুর্দশা ঘটেনি। আগামীকাল যে জাতের সংগে শত্রুতা শুরু হবে, সেই জার্মানও যেমন সহজভাবে রাজদর্শন করছে, রাজভক্ত বৃটিশ প্রজাও সেরূপ রাজদর্শন করছে। রাজার জাহাজ চলে গেল; উপকূলে কামানের গর্জন অনেকক্ষণ শোনা গেল; আমরা আপন