পাতা:ইতিকথার পরের কথা.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধারে বসিয়ে রেখে আরেক খোড়া সাহায্যের খোজে যতটা পারে তাড়াতাড়ি চলবার চেষ্টা করে। সেই কবে চাষী আন্দোলনে নেমে গুলি লেগে খোড়া হয়েছিল পা-টা, এমনি সব প্রয়োজনের সময় এত জ্বালা বোধ হয় যে বুঝতে পারা যায় খুড়িয়ে চলাটা এত দিনেও অভ্যাস হয়নি। তারই ক্ষোভ আর আপসোসে যেন চারিদিক স্তব্ধ হয়ে আছে, শিয়াল পর্যন্ত ডাকে না । আধঘণ্টা পরে পাচজন যোয়ান চাষী এসে পড়ে, একজনের হাতে একটা কালি পড়া লণ্ঠন। ভদ্রলোককে খুজতে হয় না, দূর থেকে আলো দেখেই সে ইক ডাক করে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয় । দুখান মোটা বঁাশে একটি বড় পিড়ি বেঁধে বুলিয়ে আনা হয়েছিল। দু-তিন জনে ধরাধরি করে তাকে পিড়িতে বসায়, তারপর দোলার মত চারজনে বঁাশ দুটি কঁধে তুলে নেয়। লোচন বলে, বঁাশটা ধরে ভালো হয়ে বসেন, মোরা পা চালিয়ে চলি। চুন হলুদ গরম করছে, লাগিয়ে দিলে যন্ত্রণা কমবে। জানো বাবার, ধরা গলার ভিজে। আওয়াজ থেকে সন্দেহ জাগে যন্ত্রণাকাতর মানুষটার চোখেও নিশ্চয় জল এসে গেছে,-এ দেশে খাটি মানুষ থাকে। একটা দুটো নয়, অনেক মানুষ ! গা নয়, ছোট পাড়ার মত । গায়ে গায়ে ফাকে র্যাকে এলোমেলো ভাবে ছড়ানো বারো চোদখানা খড়ের ঘর। দুখানা টিনের ঘর ছিল, টিন যখন সন্তা ছিল এবং পাওয়া যেত সেই সময় করা হয়েছিল—পুরানো ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও ইদানীং আর টিন না যোগাতে পেরে সে দুটোরও খড়ের চালা হয়েছে। পশ্চিমের ডোবার ধারে চারখানা ঘর ছিল অন্য ঘরগুলি থেকে একটু তফাতে, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত দাঙ্গাহাঙ্গামার সময় । সে ঘরগুলি আর ওঠেনি । লোচনের ঘরের ঢাকা দাওয়ায় তাকে বসিয়ে বুড়ো রসিক অন্ধকারেই নানা কথা বলে যায়। এই চাষী পাড়ায় সেই সবার চেয়ে মান্যগণ্য। পাড়ার মেয়ে পুরুষ অনেকেই এসে হাজির হয়েছে । কে এসেছে, কজন এসেছে। অন্ধকারে ঠাহর করা যায় না। শুধু কথা বললে গলার আওয়াজ থেকে মানুষটা কে বুঝে নেওয়া