পাতা:আজকের আমেরিকা.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



১৮
আজকের আমেরিকা

যাত্রী?” আমি বললাম, “আমেরিকার।” তিনি বললেন, “আমেরিকায় যান, সেখানে গেলে আপনার চোখ খুলবে। দেখবেন সাম্রাজ্যবাদীদের তাণ্ডব নৃত্য। দেখবেন ওরা নিগ্রোদের উপর কত অত্যাচার করছে। আমার মনে হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ডুয়েল এডমিনিস্ট্রেশন্‌ থাকায় ভারতীয়দের বেশ ভালই হয়েছে।” কথাটা বুঝলাম এবং তা মেনে নিতেও হল। প্রকাশ্যে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, “আমার ভ্রান্তি দূর হয়েছে।”

 আমাদের আলাপ যখন বেশ জমে উঠেছে এমন সময় একটি সুদর্শন নির্ভীক বালক এসে আমার কাছে দাঁড়াল। ছেলেটি ইংলিশ। তার সোণালী রং-এর চুলগুলি রক্তাভমুখের উপর পড়ে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল। ছেলেটির বয়স বার-তের বছরের বেশী নয়, কিন্তু এরই মধ্যে তার মুখে কর্মদক্ষতার সুস্পষ্ট ছাপ পড়েছে। ছেলেটি আমাকে ইংগিত করে ডাকল। তার ইংগিত বুঝতে পেরে তখনই উঠে আসলাম।

 প্রথমত আমরা “ডি” ডেকে নেমে জাহাজের সামনের দিকে চললাম। জাহাজ ছোট নয়, দশ মিনিটে আমাদের গন্তব্য স্থানে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। অনেকগুলি সিঁড়ি উঠানামা করে তারপর গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে হয়েছিল। আমাদের পথে ছোট ছোট বাতি মিট্ মিট্‌ করে জ্বলছিল। আমার চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ এবং চলতে পারছি না দেখে ছেলেটি আমার হাত ধরে এগিয়ে চলছিল। আমরা একটা বড় কেবিনের দরজায় এসে টোকা দিলাম। দরজা খুলে দিবার পর কেবিনে ঢুকেই দেখি, অন্তত পন্‌চাশ জন লোক বসে আছে এবং আমার অপেক্ষা করছে। স্কচ্‌, ইংলিশ, আইরিশ, ডেনিস, চেক, সব জাতের লোকই তাতে ছিল। সকলের সংগে পরিচয় হল। এরা মজুর আর আমি পর্যটক। এদের যেমন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন কাটাতে হয়, আমারও অবস্থা তেমনি।