পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘামও নাই, লোহুও নাই । বেচব কী ? চোখের জ্যোতি, সে-ও কেউ কিনবে না । রাবেয়া এই কথা শুনে পেছন ফিরে চকিতে তাকাল । মুখে এক ঘোর তমসা ছেয়ে আছে, ঠোঁট দুটি তার শুকিয়ে খরখর করছে। ফের শুধালাম, জামাই কি করে ? দামাদের মুখে নুড়ো দিতে হয় বাপ । কছম করে মজলিসে সেদিন কইলে মেয়ে লিবে, আবার কাছম খেয়ে কইছে মেয়ে লিবে না । মানুষের কিরা-কছমের কী দাম, কাহেনও তো বাপধন ! নীেকোয় চেপে বউটর দিকে বার বার দৃষ্টি ছুটে যেতে লাগল। রাবেয়া ওর খুব পাশে বসে ওরই ঘোমটার আড়ালে থাকা লাজ-লজার মিঠে ভীরুতা আর অসহায় সারল্যের মুখখানি চেয়ে চেয়ে দেখছিল, চাপা সুরে কি সব কথা চোখের ইশারায় বিনিময় হচ্ছিল জানি নে । দেখছিলাম, পাযে আলতাব পোঁচে গাৰ্হস্থ্যের নিশানা, দাম্পত্যের আহ্বাদ । ভাবছিলাম, ধূলায় মলিন পা দুখানি হয়তো পথেই হারিয়ে যাবে । কোথাও পৌঁছবে না । আরো দেখছিলাম, মনের চিন্তার চাপে চেহারা কি দ্রুত পবিবর্তিত হয়ে যায়। অচেনা হয়ে ওঠা রোমান্টিক মেযেটি দেখতে দেখতে কোথায হারিয়ে গেল । তার হৃদয়ের গোপন স্পন্দন এখন আর ধরতে পারছি না। এতক্ষণে সে সত্যিকার অচেনা হয়ে উঠেছে। একটা সামান্য দৃশ্যে মনের তাবৎ পরিস্থিতি ভূ-কম্পনের মতো ওলট-পালট হতে পারে, প্রকৃতির এই স্বাভাবিক বিপর্যয়ের নিয়ম কখনো কখনো চৈতন্যের পৃথিবীতে চােখেও দেখা যায় । আমার খুব ভয় করতে লাগল । চিতির অন্য কুলে । তালেব মিঞা নয়, তালেব মিঞার ছেলে ইদ্রিশ নীেকো বাইছে । আকাশে পান-চুনের মতো সাদা মেঘ। আকাশের রঙ মটরশুটির ফুলের মতো নীল । আশ্বিনের বিকাল এসে গেল । রোদের উত্তাপে স্নিগ্ধ আমেজ, হিমের ওম । চোখে বাতাসের মৃদু। ধারালো স্পর্শে জল ভাঙে দুঃখিত মানুষের । মানুষের দুঃখ বেড়ে ওঠে । নেীকো থেকে নেমে বিউটি আর লোকটি অন্য দিকে চলে গেল । আমরা পশ্চিমমুখে হাঁটতে লাগলাম। পলিমাটির থলথলে চোরা বিপজ্জনক মাটির কিনারা । বিধবন্ত খাড়ি । অনাবাদী ঘেসো জমিতে গোরু, ছাগল মোষের দঙ্গল । w