পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাবেয়ার তৃষ্ণা সখ্য গ্ৰীতি স্নেহ নিবারিত হয়েছে ? আজও কেন বিয়ে করব বলে হাজার প্রস্তুতি মনের মধ্যে নিশ্বফল হয়ে গেছে, বাস্তবের সংসারে তার কোনো রূপায়ণ হতে পারে নি ? এই সব মনের অচেনা কামনার স্পষ্ট দিশে পাইনি বলেই তো কাউকে বোঝাতে পারি নি, রাবেয়ার রূপ মন থেকে মুছে ফেলে অন্য কোনো নারীর কল্পনা করা দুঃসাধ্য না হলেও, তাতে কোনো মনের তাগিদ ছিল না। { এই হয়, কার মনে কিসের সুদূর কামনা অস্পষ্ট হয়ে বসবাস করে, তার গৃঢ় প্রকৃতি সে হয়তো সচেতন মনের ভাষায় নিজেকেই স্পষ্ট করে শোনাতে পারে অনেক দিনই তো মন দিয়ে মনের অসম্ভবকে শাসন করেছি। বলেছি, রাবেয়া তোমার তো একার ছিল না । তার রূপে তার হৃদয়ে তোমার প্রথম যৌবনের আকুতি মিশিয়ে তোমার আপন ভালোবাসাকে তুমি আপন হাতে আঁকা ছবির মতো সেই কবে দূর অতীতের স্মৃতির ওপারে বসে প্রত্যক্ষ করেছিলে। আর একজনও, তোমারই পরমাষ্ট্ৰীয় হৃদয়ের বালক বেলা, সেই রূপে অস্তিত্বে বয়ঃসন্ধির কামনা বাসনায় শিল্পীর মতোই মূর্তি ধরে দাঁড়িয়ে রাবেয়ার আরাধনা এবং স্তবগান করেছে। সে দেহের ভাগীদার তুমি তো একাই ছিলে না। হামিদুলের পয়সা ছিল, সে সহজেই রাবেয়াকে কিনে নিয়েছে। তোমার মেধার বিনিময়ে সেই অসম্পূর্ণ অপ্ৰস্তৃত সময়ে, (তখন তুমি অনার্স নিয়ে বি. এ. প্রথম বর্ষের ছাত্র) রাবেয়াকে দখল করতে পার নি। কিন্তু সেই কিশোরকাল আর বয়ঃসন্ধির অধিকারবোধকত-না মারাত্মক ! সে সহজে একজন মানুষকে স্মৃতি ও কামনার হাত থেকে নিস্তার দেয় না, সহজে তার নিবৃত্তি নেই। ভাবতে ভাবতে কেমন শিউরে উঠলাম। আমি । এমন সময় ফুলমতি এল । কে জানে, রাবেয়াকে দেখে কেমনধারা প্ৰতিক্রিয়া হবে । সে কি বিশ্বাস করবে, আমি সত্যিই বিয়ে করেছি। রাবেয়া কখন কোন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছে, স্নান করেছে । আমার ঘরে ধূপবাতি জ্বেলে দিয়েছে। চায়ের জল চড়াবার আগে থালাবাসন মেজে ঘষে ফেলেছে, ঘর ঝাঁট দিয়েছে। রাবেয়ার ডান হাতে চায়ের প্লেট, বাঁ হাত ফুলমতির এক হাতের জামা মুকুড় ধরা। ফুলমতিকে টেনে নিয়ে এল সামনে। বললে, ফুলমতি তােমার বললাম, হ্যাঁ । কেন, কি হয়েছে ? 8ዒ