পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ֆՀԳ বিরাজ-বেী এই লাঞ্ছিত জীবনটা নিঃশব্দে শেষ করিতে পরিবে ? আজি দুদিন হইতে সে একটা গাছতলায় পড়িয়া আছে-উঠতে পারে নাই। আবার ধীরে ধীরে রোগে ঘিরিয়াছে-কাসি, জার, বুকে ব্যথা। দুৰ্বলদেহে শক্ত অসুখে পড়িয়া হাসপাতালে গিয়াছিল, ভাল হইতে না হইতেই এই পথশ্ৰম, অনশন ও অৰ্দ্ধাশন। তাহার বড় সবল দেহ ছিল বলিয়াই এখনও টিকিয়া আছে, আর বুঝি থাকে না। আজ চোখ বুজিয়া ভাবিতেছিল, এই বৃক্ষতলই কি সেই গম্যস্থান ? ইহার জন্যই কি সে এত দেশ, এত পথ অবিশ্রাম হাঁটিয়াছে ? আর কি সে উঠবে না ? বেলা অবসান হইয়া গেল। গাছের সর্বোচ্চ চুড়া হইতে অস্তোন্মুখ সুৰ্য্যের শেষ রক্তাভা কোথায় সরিয়া গেল, সুন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি গ্রামের ভিত্ত্বি হইতে ভাসিয়া আসিয়া তাহার কানে পৌছিল, সেই সঙ্গে তাহার নিমীলিত চোখের সম্মুখে অপরিচিত গৃহস্থ-বধূদের শান্ত মঙ্গল মূৰ্ত্তিগুলি ফুটিয়া উঠিল। এখন, কে কি করিতেছে, কেমন করিয়া দীপ জ্যালিতেছে, হাতে দীপ লইয়া কোথায় কোথায় দেখাইয়া ফিরিতেছে, এইবার গলায় আঁচল দিয়া নমস্কার করিতেছে, তুলসীতলায় দীপ দিয়া কে কি কামনা ঠাকুরের পায়ে নিবেদন করিতেছে-এই সমস্ত সে চোখে দেখিতে লাগিল, কানে শুনিতে লাগিল। আজ অনেক দিন পরে তাহার চোখে জল আসিল । কত সহস্ৰ বৎসর, যেন শেষ হইয়া গিয়াছে, সে কোন গৃহে সন্ধ্যাদীপ জালিতে পায় নাই, কাহারও মুখ মনে করিয়া ঠাকুরের পায়ে তাহার আয়ু ঐশ্বৰ্য্য মাগিয়া লয় নাই। এ সমস্ত চিন্তাকে সে প্ৰাণপণে সরাইয়া রাখিত, কিন্তু আর পারিল না । শাখের আহবানে তাহার ক্ষুধিত তৃষিত হৃদয় কোন নিষেধ না মানিয়া গৃহস্থ-বধূদের ভিতরে গিয়া দাড়াইল। তাহার মনশ্চক্ষে প্ৰতি ঘর-দোর, প্ৰতি প্রাঙ্গণ-প্ৰান্তর, বাঁধান তুলসী-বেদী, প্রতি দীপটি পৰ্য্যন্ত এক হইয়া গেলএ যে সমন্তই তাহার চেনা ; সবগুলিতেই এখন যে তাহারই হাতের চিহ্ন দেখা যাইতেছে! আর তাহার দুঃখ রহিল না, ক্ষুধা-তৃষ্ণা রহিল না,