পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তারকনাথ পালিত

 বনমালী বাবুর ক্লাসে আমার পড়াশুনা কেমন হত মনে নাই কিন্তু একটি জিনিসের জন্য সে বৎসরটি আমার চিরস্মরণীয় থাকবে— সে কি না বন্ধুলাভ! আমার সহাধ্যায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমি যে একটি বন্ধুরত্ন পেয়েছিলুম তিনি আমার চিরজীবনের সঙ্গী হয়ে রইলেন। ছেলেবেলায় তিনি আমাকে কত ভালবাসতেন, আমাকে ভাল ভাল পায়রা—লক্কা মুক্ষী লোটন গলাফোলা এনে দিয়ে কত রকমে আমাকে সুখী করবার চেষ্টা করতেন, স্কুলে ও বাড়ীতে সর্বদাই আমরা মাণিক জোড়ের মত এক সঙ্গে থাকতুম। আমার ছেলেবেলাতেই একবার এমন বাত হয়েছিল যে, চলতে কষ্ট হত— তখন তাঁর কাঁধে ভর দিয়ে দিয়ে চলতুম। বড় হয়ে যখন তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লুম, তখনো আমরা বন্ধুত্বসূত্রে বাঁধা। আমি বিলাত যাই ১৮৬০ খৃষ্ঠাব্দে, বয়স তখন ১৯; বিলাত থাকতে আমাদের পত্র ব্যবহারে কোনদিন ত্রুটি হয়নি। যখন আমি বোম্বায়ে কাজ আরম্ভ করি তখনও তারক বিলাত যাননি। তিনি বিলাত থেকে ফিরে আসার বছর দুই পরে—১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে। ব্যারিষ্টার হয়ে দেশে ফিরে আসতে আসতেই প্রায় তিনি ব্যারিষ্টারীতে প্রতিপত্তি লাভ করেন। আমি যখন বিদেশে কর্মস্থলে তখন তিনি এখানে থেকে আমাদের বিষয়-কর্ম সংক্রান্ত সকল বিষয়ে পরামর্শদাতা ও সর্বতোভাবে হিতচিন্তক ছিলেন। আমাদের পরিবারের সবাইকে আপনার মত করেই দেখতেন। তাঁর ভালবাসার চিহ্নসকল আমার জীবনময় ছড়ানো রয়েছে আর তাঁর কাছ থেকে সময়ে অসময়ে যে সকল উপকার পেয়েছি তার জন্য আমি তাঁর নিকটে চিরঋণী। আমার জীবনের উপর দিয়ে কতশত ঘটনা গিয়েছে, অবস্থার কত পরিবর্তন হয়েছে, কত লোকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় বন্ধুতা হয়েছে