পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বারকানাথ ঠাকুর

 আমাকে কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করেন আমার পিতামহ দ্বারকনাথ ঠাকুরকে মনে পড়ে কি না? তার উত্তরে বলতে পারি একেবারে মনে পড়ে না তা নয়, স্পষ্ট মনে পড়ে তাও নয়। একদিন তিনি আমাদের তিন ভাইকে ঘরে ডেকে নিয়ে কিছু দিয়েছিলেন, দুচারটি হাসির কথা বলেছিলেন, সে ঘরটি মনে আছে আর তাঁর চেহারাও মনে পড়ে, তবে ঝাপসা ঝাপসা। তাঁর যে চেহারা আমার মনে অঙ্কিত আছে তা সে-সময়কার চাক্ষুষ জ্ঞান থেকে কিম্বা তাঁর যে সকল চিত্র আমরা সচরাচর দেখিতে পাই তার প্রতিচ্ছবি তা ঠিক বলা যায় না—খুব সম্ভব শেষটাই হবে।

 কর্তাদাদা যখন আমাদের ছেড়ে বিলাত যাত্রা করেন তখন আমরা নিতান্ত শিশু, সে সব ঘটনা কিছুই মনে নাই। এদেশে যখন তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আসে তখন আমরা বোটের মধ্যে গঙ্গার উপরে ভাসছিলুম—ভয়ানক ঝড় তুফান উঠেছে আর বড়দাদা হেমেন্দ্র ও আমি মার কাছে ভয়ে জড়সড়,—সেই তুফানের মধ্যে আমাদের একজন ভৃত্য কর্তাদাদার মৃত্যু সংবাদ এনে বাবামশায়ের হাতে দিলে। এই ঘোর দুর্যোগে আমরা পলতার বাগানে নেমে, সেখান থেকে গাড়ীতে উঠে কোন প্রকারে বাড়ী পৌঁছলুম—পৌঁছেই দুধ দুধ করে অস্থির। এইটুকু আমার মনে আছে। পিতার আত্মজীবনীতে ঘটনাটির বর্ণনা এইরূপ:—

 “আমাদের স্বরূপ খানসামা আমার হাতে পিতার মৃত্যু সংবাদ আনিয়া দিয়া বলিল, কলিকাতা তোলপাড় হইয়া গিয়াছে। এ সংবাদ হঠাৎ বজ্রপাতের ন্যায় আমার মস্তকে পড়িল। আমাদের বোট ও পিনিস কালনা ছাড়াইয়া কতদূর গিয়াছে, পরদিন প্রাতঃকালেই কলিকাতার অভিমুখে ফিরিলাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে