পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নবগোপাল মিত্র

 উপরে যে জাতীয় মেলার কথা বলেছি তার প্রধান উদ্যোগী ছিলেন নবগোপাল বাবু। তিনি হিন্দু স্কুলে আমার সহাধ্যায়ী ছিলেন, স্কুল ছেড়ে আমাদের সহকর্মী হলেন; আমাদের মধ্যে প্রণয় ও ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়ল, তিনি সর্বদা আমাদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করতে লাগলেন। তিনি ভারী চালাক চতুর, খুব একজন কাজের লোক ছিলেন। তিনি একটা অশ্বশালা খুলেছিলেন, তাকে সবাই বলত নবগোপালের Circus, তাতে আমরা কেউ কেউ ঘোড়ায় চড়া শিখতে যেতুম। ‘Indian Mirror’ পত্র যখন আমার পিতৃদেবের হাত হতে হস্তান্তর হল, সেই পত্রের প্রতিযোগী ‘National Paper’ বলে একটা ইংরাজি সাপ্তাহিক পত্র আমাদের বাড়ী থেকে বেরতে লাগল, নবগোপাল বাবু তার সম্পাদক হয়েছিলেন। ‘ব্রাহ্মবিবাহ’ আইন যখন বিধিবদ্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল তখন যাঁরা আদি ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ সমর্থন করবার জন্য সিম্‌লার পাহাড়ে প্রেরিত হন, নবগোপাল বাবু তাঁদের মুখপাত্র ছিলেন। আদি সমাজের বিরুদ্ধাচরণের ফলে দাঁড়াল এই যে, হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান প্রভৃতি প্রচলিত কয়েকটি প্রধান প্রধান ধর্মসম্প্রদায়ের বাইরে না গেলে আর রেজিস্ট্রী বিবাহ সিদ্ধ হয় না। সুতরাং আমাদের মধ্যে যাঁরা এই আইনের শরণাপন্ন হতে চান তাঁরা আপনাদের অহিন্দু বলে প্রকাশ্যে পরিচয় দিতে বাধ্য। এই আবর্তের মধ্যে পড়ে এখন আমরাই আর্তনাদ ছাড়ছি—এই অহিন্দু Declaration উঠিয়ে দিয়ে বিবাহ আইন সংস্কারের জন্য সচেষ্ট হয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের হাজার চেষ্টাতেও কোন ফল হচ্ছে না।

 বোম্বাই থেকে আমি একবার ছুটিতে কলকাতায় এসে বোম্বাই