পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
আত্মচরিত

স্থান দেখিয়া যাইব বলিয়া স্থির করিলাম। এই উদ্দেশ্যে একখানি অগ্রগামী ‘ওমনিবাস’ যাত্রী গাড়ীতে উঠিলাম। প্যারিস দেখিয়া আমি দক্ষিণ ফ্রান্সের ভিতর দিয়া আল্পস পর্বতশ্রেণী পার হইলাম। বহ‍ু ‘টানেল’, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রভৃতি আমার চোখে পড়িল। আমাদের গাড়ী দুই ঘণ্টার জন্য পিসা সহরে থামিল— আমি সেই অবসরে বিখ্যাত (Leaning Tower) দেখিয়া আসিলাম। ইটালী দেশে রেলওয়ে স্টেশনে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় না। কিন্তু প্রচুর সস্তা ও হাল্কা মদ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা আছে। আমাকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ষ্টেশনের জলের কলের নিকট প্রায়ই দৌড়াইতে হইত। রোমে গাড়ী থামিলে আমি সহরের রাস্তায় ঘুরিয়া ‘ক্যাপিটল’ প্রভৃতি দেখিলাম।

 ইটালীবাসীরা সদানন্দ লোক, কথাবার্তা বেশী বলে। ইংরাজদের মত স্বল্পভাষী নয়। ফরাসী ভাষায় আমার সামান্য জ্ঞান লইয়া আমি কোনরূপে কথাবার্তার কাজ চালাইতে লাগিলাম। আমার সৌভাগ্যক্রমে যাত্রীদের মধ্যে একজন অস্ট্রিয়ান ছিলেন। তিনি ভাল ইংরাজী বলিতে পারিতেন। আমার সঙ্গে তাঁহার বন্ধুত্ব হইল। তিনি ট্রিষ্টে যাইতেছিলেন। তিনি যখন শুনিলেন যে আমি ব্রিন্দিসিতে মেল ষ্টীমার ধরিব তখন তিনি টাইম টেবিল দেখিয়া গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়িলেন। কহিলেন “আমার আশঙ্কা হয়, আপনি ‘মেল’ ধরিতে পারিবেন না, কেন না এই গাড়ী একদিন পরে ব্রিন্দিসিতে যাইয়া পৌঁছিবে।” তিনি আমার জন্য অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিলেন এবং একটী ষ্টেশনে গাড়ী বেশীক্ষণ থামিলে তিনি ষ্টেশন মাষ্টারের সঙ্গে পরামর্শ করিলেন। ষ্টেশন মাষ্টার বলিলেন যে, রেলওয়ে মেলগাড়ী শীঘ্রই পৌঁছিবে। এবং আমাকে আর কিছু অতিরিক্ত ভাড়া দিয়া তৃতীয় শ্রেণীর টিকেটখানি বদলাইয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর একখানি টিকেট লইতে হইবে। এই অতিরিক্ত ভাড়ার পরিমাণ প্রায় ৩ পাউণ্ড। ইহার পর আমার পকেটে মাত্র কয়েক শিলিং থাকিল।