পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (প্রথম বর্ষ).pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোন বীর্য্যবতী ভারতরমণীর কথা বলিতে হইলেই আমাদিগকে বাঙ্গালার শু্যামল প্রান্তর ছাড়িয়া দূর রাজপুতানার ঊষর ক্ষেত্রের এবং মহারাষ্ট্র দেশের রূক্ষ পার্ব্বত্য সৌন্দর্য্যের মধ্যে অনুসন্ধান করিতে হয়। কিন্তু সত্য সত্যই কি এত বড় বাঙ্গালা দেশে এমন একজন বীরাঙ্গনাও জন্ম গ্রহণ করেন নাই যাহার বীরকীর্ত্তিগাথা গাহিয়া আমরা ধন্য হইতে পারি ? এক দিন যে দেশের নরনারীর নিকট সহমরণের পুণ্যকথা একান্ত পরিচিত ছিল-যে দেশের নারী সংসারের শত মায়ার বন্ধনকেও মৃত পতির পুত স্মৃতির নিকট তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া সানন্দে মরণকে বরণ করিয়া লইতেন-সে দেশের অধিবাসী আমরা, আমাদের নিকট রাজপুতলালনগণের ‘জহর ব্রতের” কথা যত পরিচিত-একজনও বঙ্গীয় রমণীর আত্ম-বিসজনকাহিনী তত পরিচিত নহে। ইতিহাসকে পুর্ণাবয়বে গড়িয়া তুলিতে হইলে এক দিকে যেমন দেশের বীরপুত্রগণের মহজজীবনীর আলোচনা করা আবশ্যক, অন্যদিকে আবার তেমনই অনুসন্ধান দ্বারা বীরাঙ্গানাগণের বিস্মৃত কীর্ত্তি-কথার উদ্ধার • সাধনে যত্নৰান হওয়াও আমাদের একান্ত কর্ত্তব্য । আমরা সেই আশা হািদয়ে পোষণ করিয়াই অদ্য বাঙ্গালার প্রাচীন ইতিহাসের পৃষ্ঠা হইতে একজন বীর্য্যবতী। বঙ্গরমণীর অপূৰ্ব বীরত্বের ও আত্ম-বিসর্জন-কাহিনীর পুণ্য ইতিহাস পাঠকবর্গকে উপহার প্রদান করিলাম। আশা করি, তঁহাৱাও ভবিষ্যতে আমাদিগকে এ বিষয়ে 'সাহায্য করিবেন। বাঙ্গালার ইতিহাস পাঠকের নিকট বারভুঞার কাহিনী চিরপরিচিত। আবার সে সকল প্রাতঃস্মরণীয় ভূঞাগণের মধ্যে বিক্রমপুরাধিপতি চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের বীরত্ব-গাথাই বা কাহার অজ্ঞাত ? আমাদের প্রবন্ধোক্ত সোণাবিবি চাদ রায়ের কন্যা ও কেদার রায়ের ভ্রাতুষ্পপুত্রী। সোণামণি বা স্বর্ণময়ী বালবিধবা । তৎকালে তঁহার রূপলাবণ্যের খ্যাতি পূর্ববঙ্গের সর্বত্র প্রবাদের ন্যায় প্রচলিত ও পরিচিত্ত ছিল । বিধবা সোণামণি হিন্দুর চিরপবিত্র ব্রহ্মচর্য্যানুষ্ঠান দ্বারা পিত্রলয়ে দিনাতিপাত করিতেন । কিন্তু ভাগ্যচক্রের বিস্ময়কর আবর্ত্তনে তাহার জীবন ভিন্ন পথে চালিত হইয়া কল্পনাতীত কার্য্যপরম্পরার সৃষ্টি করিয়াছিল। সে ষোড়শ শতাব্দীর কথা । তখন বাঙ্গালা দেশে বড় গোলযোগ। মোগল সম্রাট আকবর স্বীয় সুদীর্ঘ জীবনের সন্ধ্যায়, এবং তঁহার পরলোক গমনের পরে, সম্রাট জাহাঙ্গীর তাহার সিংহাসনারোহণের পরেই বারভুঞাগণের বিদ্রোহ সমা