পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (চতুর্থ বর্ষ).pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্দির প্রলেপাস্তুত। বহুবিধ উপাদান মিশাইয়া এই প্রলেপ প্রস্তুত করা: হইত। বৃহৎসংহিতায় এইরূপ প্রলেপের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। অপক তিন্দুক ফল, কপিখ, শান্মলীকুসুম প্রভৃতি জলে সিদ্ধ করিয়া এই প্রলেপ প্রস্তুত করা হইত। প্রস্তর এই প্রলেপাস্তৃত হইলে জলবায়ুর ধ্বংশকীর প্রভাবে সহজে নষ্ট হয় না। উড়িষ্যার কোন কোন মন্দিরের বহির্ভাগে চুণের প্রলেপও বোধ হয় এইরূপ কারণেই প্রদত্ত হইয়াছিল। জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষোদিত মূর্ত্তি প্রভৃতির বিকৃতির প্রমাণ মন্দিরগাত্রে যথেষ্ট আছে। গ্রন্থকার কনার্কমন্দিরের বহির্ভাগে ক্ষোদিত মূর্ত্তির দুৰ্গতির কথা বলিয়াছেন। আর গ্রন্থের ভূমিকায় মিষ্টার উডরফ বলিয়াছেন, তিনি প্রথম বার কমার্কে যাইয়া ক্ষোদিত মূর্ত্তিগুলি যেরূপ দেখিয়া ছিলেন, দ্বিতীয় বার যাইয়া আর সেরূপ দেখিতে পায়েন নাই। সেগুলিকে আর চিনাই যায় না ! বায়ুবাহিত বালুকার আঘাতে ক্ষোদিত মূর্ত্তি প্রভৃতির বিকৃতি নিবারণের জন্য পুৱাবস্তু বিভাগ মন্দিরপ্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করিয়াছেন।—যদি বালুকার বেগ বৃক্ষে প্রহত হইয়া নিবৃত্ত হয় । যখন জল বায়ুর প্রভাবে ক্ষোদিত মূর্ত্তি প্রভৃতির এইরূপ বিকৃতি ঘটে তখন কনার্কের শিল্পকীর্ত্তি নবগ্রহ মূর্ত্তি স্থানান্তরিত করা যে সুবুদ্ধির কার্য্য হয় নাই তাহা বলাই বাহুল্য। ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় আনিবার জন্য ইহা স্থানচ্যুত করিয়া দ্বিখণ্ডিত করা হয়। কিন্তু এই গুরুভার শিলাখণ্ড কলিকাতায় লওয়া হয় নাই। বহু শতাব্দী পূর্বে উড়িষ্যার লোক যে শিলাখণ্ড বহু দূর হইতে আনিয়াছিল, আজ ইংরাজ এঞ্জিনিয়ারগণ সেই শিলাখণ্ড দ্বিখণ্ডিত করিয়াও স্থানান্তরিত করিতে পারিলেন না ! অকাল-নিৰ্বাপিতজীবন-দীপ বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যই লিখিয়াছিলেন,-“সেই অতুল্য শিল্পনবগ্রহ ; উজ্জ্বল কৃষ্ণ পাৰাণখণ্ডে মুদ্রিত কয়টি বুদ্ধসদৃশ প্রশান্ত হাস্তবদন, হস্তে কাহারও জপমালা, কাহারও বা অৰ্দ্ধচন্দ্র, কাহারও বা পূর্ণঘট । এখন এই নবগ্রহ মূর্ত্তি মন্দির হইতে প্রায় চারি শত হস্ত দুরে ইংরাজের লৌহ রথোপরি শায়িত-কলিকাতায় আনিতে আনিতে আনা হয় নাই ; পথিকেরা তাহার গায়ে সিন্দর লেপন পূর্বক ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া যায় ; কিন্তু এই নূতনলব্ধ ভক্তি এবং প্রতি লাভ করিয়াও আর কিছুকাল পড়িয়া থাকিলে এই অক্ষুন্ন প্রাচীন কীর্ত্তি শ্রীভ্রষ্ট হইয়া পড়িবে।” : annomspinnengo