পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার গীতিকবিতা । বাঙ্গলার জল, বাঙ্গলার মাটির মধ্যে একটা চিরন্তন সত্য নিহিত আছে। সেই সত্য, যুগে যুগে আপনাকে নব নব রূপে, নব নব ভাবে প্ৰকাশিত করিতেছে । শত সহস্ৰ পরিবর্ভন, আবৰ্ত্তন ও বিবৰ্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিরন্তন সত্যই ফুটিয়া উঠিয়াছে। সাহিত্যে, দর্শনে, কাব্যে, যুদ্ধে, বিপ্লবে, ধৰ্ম্মে, কৰ্ম্মে, অজ্ঞানে, অধৰ্ম্মে, স্বাধীনতায়, পরাধীনতায় সেই সত্যই আপনাকে ঘোষণা করিয়াছে, এখনও করিতেছে। সে যে বাঙ্গলার প্রাণ, বাঙ্গলার মাটী, বাঙ্গলার জল, সেই প্ৰাণেরই বহিরাবরণ। বাঙ্গলার ঢেউ খেলান শ্যামল শস্যক্ষেত্র, মধু-গন্ধ-বহু মুকুলিত আম্রকানন, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ ধূনা জ্বালা সন্ধ্যার আরতি, গ্রামে গ্রামে ছবির মতন কুটীর প্রাঙ্গণ, বাঙ্গলার নদ নদী, খাল বিল, বাঙ্গলার মাঠ, বাঙ্গলার ঘাট, তালগাছ ঘেরা বাঙ্গলার পুষ্করিণী, পুজার ফুলে ভরা গৃহস্থের ফুলবাগান, বাঙ্গলার আকাশ, বাঙ্গলার বাতাস, বাঙ্গলার তুলসীপত্র, বাঙ্গলার গঙ্গাজল, বাঙ্গলার নবদ্বীপ, বাঙ্গলার সেই সাগর-তরঙ্গে চরণ-বিধৌত জগন্নাথের শ্ৰীমন্দির, বাঙ্গলার সাগর-সঙ্গম, ত্ৰিবেণী-সঙ্গম, বাঙ্গলার কাশী, বাঙ্গলার মথুরা-বৃন্দাবন, বাঙ্গালীর জীবন, আচার-ব্যবহার, বাঙ্গলার সমগ্ৰ ইতিহাসের ধারা যে, সেই চিরন্তন সত্য, সেই অখণ্ড অনন্ত প্ৰাণেরই পবিত্র বিগ্ৰহ! এই সবই যে সেই প্ৰাণ-ধারায় ফুটিয়া ভাসিতেছে, দুলিতেছে।