পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

· ዩጋb”8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অগ্ৰাহ্য করেছে। তখনই তার সেই প্ৰসন্ন মুখের হাস্যচ্ছােটা বিকীর্ণ হয়ে সত্যজ্যোতিতে অভিষিক্ত করে দেয়। রুদ্রের সেই প্ৰসন্নতা আজ উৎসবের দিনে আমাদের জীবনের উপরে বিকীর্ণ হােক । প্ৰাতে ৭ পৌষ ১৩২১ SVSS আশ্চর্য কথা এই যে আমরা এই গানে বলছি যে, তুমি আমার ভবনে অতিথি হয়ে এসেছি। এই একটি কথা বলবার অধিকার তিনি আমাদের দিয়েছেন । যিনি বিশ্বভুবনের সব জায়গা জুড়ে বসে আছেন, তাকেই আমরা বলছি, “তুমি আমার ভবনে অতিথি।' কারণ, আমার ভবনে তঁাকে ডাকবার এবং না। ডাকবার অধিকার তিনিই আমাকে দিয়েছেন। তাই সেই সর্বব্যাপী ঈশ্বরকে ইচ্ছা করলে ভবনের দ্বারে দাঁড় করিয়ে রাখতে જલેિ জীবনে কত অল্প দিন আমরা সেই বন্ধুকে ঘরে ডেকে আনি । তাকে আমার ভবনে ডাকব এমন দিন তো আসে না । তিনি এই ঘরের প্রান্তেই মুখ আবৃত করে বসে থাকেন ; অপেক্ষা করেন- “দেখি আমায় ডাক দেয় কি না ।” তিনি আমার ঘরের সামান্য আসবাবটি পর্যন্ত প্ৰকাশ করছেন, তিনি সর্বঘরে সর্ববিষয়ের মধ্যে প্ৰকাশ পাচ্ছেন, অথচ তিনিই ঘরে নেই। প্রত্যেক নিশ্বাসের ওঠানামায় তার শক্তি কাজ করছে, চক্ষের প্ৰত্যেক পলক তঁর ইচ্ছায় পড়ছে, রক্তের প্রত্যেক কণা নিরস্তর ধাবিত হচ্ছে, অথচ আমাদের এতবড়ো আম্পর্ধা। তিনি দিলেন যে, আমরা না ডাকলে তিনি ঘরে প্রবেশ করবেন না । সেইজন্যে যেদিন তিনি আসেন সমস্ত হৃদয় খুলে দিয়ে সেদিন প্রেমের ডাকে তাকে ডাকি, সেদিন বিশ্বভুবনে রব ওঠে ; তিনি এসেছেন। সূর্যের তরুণ আলোকে সেই বাণী প্ৰকাশ হয়, নক্ষত্র হতে নক্ষত্রে সেই বার্তা ধাবিত হয়, বিকশিত পুষ্পের পাপড়িতে পাপড়িতে লেখা থাকে : তিনি এসেছেন । তিনি অপেক্ষা করে ছিলেন আলোকের পর্দার ও পারে, জীবনের সুখদুঃখের ও দিকে ; ডাক যেই পড়ল অমনি যিনি অনন্ত বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে সূৰ্যর্চন্দ্ৰতারার জোতির্ময় সিংহাসনে বসে ছিলেন তিনি একটি কীটের গহবরের মতো ক্ষুদ্র ঘরে স্থান পেলেন । অনন্ত বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে তার স্থান ছিল, স্থান ছিল না। এই ছোটাে ঘরটিতে । এই ঘরটি ধনজনমানে ভর্তি ছিল, তাই তার জন্য এখানে জায়গা হয় নি । কিন্তু, যেদিন এলেন সেদিন তড়িৎবেগে সমস্ত বিশ্বে এই বার্তা গোপনে গোপনে প্রচারিত হয়ে গেল ; তিনি এসেছেন । ফুলের সৌন্দর্যে, আকাশের নীলিমায় এই বার্তা ব্যাপ্ত হয়ে গেল । পুত্র কখনো কখনো পিতার জন্মোৎসব করে থাকে, সংসারে এমন ঘটনা ঘটে । সেদিন পুত্ৰ মনে ভাবে যে তার পিতা একদিন শিশু হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেদিন যেন তার ঘরে সে নুতন করে তার পিতার জন্মব্যাপারকে অনুভব করে । পিতাকে সে যেন নিজের পুত্রের মতো লাভ করে । এ যেমন আশ্চৰ্য, তেমনি আশ্চর্য বিশ্বপিতা যেদিন জন্মগ্রহণ করেন আমাদের ঘরে । যিনি অনন্ত ভুবনের পিতা তিনি একদিন আমার অন্তরের ভিতরে চৈতন্যের মধ্যে জন্মলাভ করবেন ; তিনি আসবেন । পিতা নোহসি । পিতা তুমি পিতা হয়ে আছ, আমার জীবনকে তোমার মহাজীবনে আলিঙ্গন করে আছ, যুগ হতে যুগে লোক হতে লোকান্তরে আমায় বহন করে এনেছ । পিতা নো বোধি । কিন্তু, আমার বোধের মধ্যে তো তোমার আবির্ভাব হয় নি । সেই বোধের অপেক্ষায়, আমার উদবোধনের অপেক্ষায় যে তাকে থাকতে হয় । যেদিন আমার বোধের মধ্যে পিতারূপে তার আবির্ভাব হবে সেদিন পৃথিবীতে শঙ্খধ্বনি বেজে উঠবে। ভক্তের চৈতন্যে সেদিন যে তার নবজন্মলাভ । সংসারের সুখে দুঃখে যখন তরঙ্গায়িত হচ্ছি, চৈতন্যের মধ্যে তখন আমরা পিতৃহারা। জীবধাত্রী বসুন্ধরা পিতার সিংহাসন বহন করছে ; প্রাণের ভাণ্ডার, অন্নোর ভাণ্ডার সেখানে পরিপূর্ণ। কিন্তু, অন্তরে যে দুৰ্ভিক্ষ,