পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—চলুন যাই। পকেট হইতে একগোছা চাবি বাহির করিয়া ডাক্তারবাবু আমার নাকের কাছে ধরিয়া বলিলেন—এই দেখুন। মনিঅৰ্ডারে টাকা আসচে। অফিসে, রোজ একগোছা চিঠি আসচে, আপনি দেখুন না। মশাই। না দেখলে ঠাকবেন। এর পরে। তবে আপনি না নিলে জোর করে তো আপনাকে দেওয়া হবে না রাস্তায় ভীষণ কাদা। একটা গোয়াল-পাড়ার ভিতর দিয়া যাইতেছিলাম, মহিষ ও গরুর বাথান চারিদিকে। অত্যন্ত দুৰ্গন্ধ বাতাসে। ইহাতে মশা বিন-বিনা করিতেছে। খানিকদূর গিয়া একটা অবাঙালী কুলির বস্তি, যেমন নোংরা, তেমনি ঘিঞ্জি । তারপরে আবার জঙ্গল, বঁাশবন আর ডোবা । মাইলখানেক দূরে জঙ্গলের একপাশে বাস্তার ধারে একটা টিনের সাইনবোর্ডে বড়-বড় করিয়া লেখা আছে-“আচাৰ্য কৃপালনী কলোনি’ । এখানে আসিয়া ডাক্তাববাবু দাড়াইলেন। সামনের দিকে হাত দিয়া দেখাইয়া বলিলেন-এই-- চারিদিক চাহিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিলাম। বিস্ময়বোধেব শক্তিও যেন হারাইয়া ফেলিয়াছি। ইহারই নাম, আচাৰ্য কৃপালনী কলোনি ? এই সেই বহু-বিজ্ঞাপিত ভূখণ্ড ? কোথায় ইহার পাদদেশ ধৌত করিয়া গঙ্গা প্ৰবাহিত হইতেছে ? কোথায় সুন্দর প্ৰাকৃতিক দৃশ্য ? পঞ্চাশফুট চওড়া রাস্তা, ইলেকটুক আলো, জলের কল প্রভৃতি ছবির সঙ্গে এই অন্ধকার বঁাশবন, কচুবন, ওলবন আর মশাভিরা ডোবার খাপ খাওয়াইতে অনেক চেষ্টা কৰেিলাঁ ; মনকে অনেক বুঝাইলাম, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ কি ছিল ? অমুক কি ছিল ? কিন্তু পারিয়া উঠিলাম না। তাহা ছাড়া এখানে ডাঙ্গা-জমিই বা কোথায় ? সব তো জলে-ডোবা আর জলের মধ্যে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়া আছে বনকচুর ঝাড়।