পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত একজন চালওয়ালী বললে-পাঁচ সিকে । গঙ্গাচরণ এবং উপস্থিত সকলেই আশ্চযা হয়ে গেল, পাঁচ সিকে পালি, অর্থাৎ কুড়ি টাকা মণি ! নবীন পাড়াইয়ের মািখ শকিয়ে গেল, সে একটা টাকা এনেচে-পাঁচ সিকে না হােলে এক কাঠা চাল কেউ বিক্লিক করবে না } এক টাকার চাল কেউ দেবে না । এরা সকলেই আশ্চর্য হয়ে গেলেও দেখলে যে চাল যদি সংগ্রহ করতে হয় তবে এই ক্লো। ” বিলম্বে হতাশ হতে হবে । আরও পাঁচ-ছ'জন ক্লে তাকে দরে আসতে দেখা যাচে । দ'জন লোক এদের মধ্যে নিরাপায়। ওদের হাতে বেশি পয়সা নেই। সতরাং চাল কিনবার আশা ওদের ছাড়তে হোল। এই দলে নবীন পাড়াই পড়ে গেল । গঙ্গাচরণ বললে-নবীন, চাল নেবে না ? --না। বাবাঠাকুর, একটা সিকি কম পড়ে গেল । —তবে তো মশকিল। আমার কাছেও নেই যে তোমাকে দেবো । SHBBBB S SDD DD BBBD DDB BBBS ELBD zSDBDD S S DB BTOB Z বেচবার দরুণ ছেল দশ আনা। কুড়িয়ে-বাড়িয়ে একটা টাকা এনেলাম চাল কিনতি। তা আবার চালের দাম চড়ে গেল কি করে জানবো ? --তাই তো ! --আধাপেটা খেয়ে আছি। দ’দিন। চাষীদের ঘরে ভাত আছে, আমাদের তা নেই। আমাদের কন্ট সকলের অপেক্ষা বেশি। জলের প্রাণী, তার ওপর তো জোর নেই ? ধরা না দিলে কি করাচি । যেদিন পালাম সেদিন চাল আনলাম, যেদিন পালাম না সেদিন উপোস । আগে ধান চাল ধার দিতো, আজকাল কেউ কিছ দেয় না। গঙ্গাচরণ কাঠাদই চাল সংগ্রহ করেছিল কড়াকড়ি করে। তার ইচ্ছে হোল একবার এই চাল থেকে নবীন পাড়াইকে সে কিছু দেয়। কিন্তু তা কি করে দেওয়া যায়, চালের অভাবে হয়তো উপোস করে থাকতে হবে কালই । গ্রামে ধান চাল মেলে না যে তা নয়, মেলে। অতি কষ্টে । ধান চাল থাকলেও লোকে স্বীকার করতে চায় না। সহজে । নবীন পাড়াইকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গাচরণ রাধিকানগরের বাজারে এল। এক টাকার চালাই কিনে দেবে তাকে । দোকান ছাড়া তো হবে না । কিন্তু মশকিলের ব্যাপার, বড় বড় তিন-চারিটি দোকান খাঁজে বেড়ালে, সকলেরই এক বলি-চাল নেই। গঙ্গাচরণের মনে পড়লো বদ্ধ কুন্ডু মশায়ের কথা। এই গত বৈশাখ মাসেও কুন্ডু মশায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্চে সে, কুন্ডু মশাই তাকে ডেকে আদর করে তামাক সেজে খাইয়ে বলেচে-পশিডত মশাই, আমার দোকান থেকে চাল নেবেন, ভাল চাল আনিয়েচি । কত খাতির করেচে। কুন্ডু মশায়ের দোকানে গেলে ফিরতে হবে না, ঠিক পাওয়া যাবেই। কিন্তু সেখানেও তথৈবচ, গঙ্গাচরণ দোকানঘরটিতে ঢুকবার সময় চেয়ে দেখলে বা পাশের যে বাঁশের মাচায়। চালের বস্তা ছাদ পর্যন্ত সাজানো থাকে, সে জায়গা একদম খালি, হাওয়া খেলচে । বদ্ধ কুন্ডু মশায় প্রণাম করে বললে-আসন, কি মনে করে ? অভ্যর্থনার মধ্যে বৈশাখ মাসের আন্তরিকতা নেই যেন। প্রণামটা নিতান্ত দায়সারা গোছের । গঙ্গাচরণ বললে--কিছু চাল দিতে হবে।