পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোটা ছিল, এজন্য ক্লাসের ছেলেরা তাহাকে ‘গঙ্গাধৱ হাতি’ বলিত । গঙ্গাধর” পড়াশোনাতে বড় মনোযোগী ছিল না, সেজন্য ওঠা-নামার সময় উপরে উঠতে পারিত না । একদিন কিন্তু ঘটনাক্রমে গঙ্গাধর ফাস্ট হইয়া গেল। তখন তাহার আমাদের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টি দেখে কে ? তাহা আমার সহ্য হইল না। পরদিন আমি তাহার নামে কবিতা বাধিয়া ক্লাসে উপস্থিত। একটার ছুটির সময় সমস্ত ক্লাসের ছেলেদিগকে ও তন্মধ্যে গঙ্গাধরকে দণ্ডায়মান করিয়া, সেই কবিতা পাঠ করা হইল। সমুদয় কবিতাটি আমার মনে নাই। চারি পংক্তি মাত্র স্মরণ আছে। স্ত্র হৈ निgभ ऐटछुड कडिछि ইজার চাপিকান গায় ইস্কুলে আসে যায় নাম তার গঙ্গাধর হাতি, বড় তার অহঙ্কার ধরা দেখে সরকার, চলে যেন নবাবের নাতি । কবিতা যখন পড়া হইল, তখন ছেলেদের করতালিতে ও অট্টহাস্যে সমুদয় স্কুলের ছেলে জড়ো হইল । গঙ্গাধর অপমানে কঁাদিয়া ফেলিল ; এবং মাস্টার মহাশয়ের নিকট নালিশ করিল। কুমারখালির চাদমোহন মৈত্র মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাধাগোবিন্দ মৈত্র, তখন আমাদের ইংরাজীর মাস্টার ছিলেন। তিনি কবিতাটি আমার হাত কহন্ত্রে লইয়া মনোযোগ পূর্বক পাঠ করিলেন, এবং আমার মস্তকে তাত দিয়া বলিলেন, “তোমার কবিতা বেশ হয়েছে, কিন্তু মানুষকে গলাগলি দিয়ে কবিতা লেখা ভালো নয়” । ইহার পর আমার কবিতা লিখিবার উৎসাহ বাড়িয়া গেল । ঈশ্বর গুপ্তের কবিতা । ফলতঃ, আমি যে কত ছোট বয়সে কবিতা লিখিতে আরম্ভ করিয়াছি, তাহা মনে নাই। বর্ণপরিচয় হইলেহ মা আমাকে পুত্ত্বিবাসের রামায়ণ পড়িয়া শুনাইতে বলিতেন, অথবা নিজে মুখে মুখে অনুত্তি করিয়া শুনাইতেন । সেই সকল কবিতা আমার কানে লাগিয়া ; ছল । তৎপরে কলিকাতাতে আসিয়া ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতা কোনো প্রকারে হাতে পাইলেই গিলিয়া খাইতাম । তৎপরে আমার বাবা কবিতার রসগ্রাহী মানুষ, তিনি বন্ধুদের সহিত ভারতচন্দ্র প্রভৃতির কবিতার সমালোচনা করিতেন। এই সকল কারণে আমার শৈশব হইতে কবিতা লিখিবার বাতিক জাগিয়া থাকিবে। আমার দশ বৎসর বয়সের লিখিত খাতা পরে দেখিয়াছি। তাঁহাতে কয়েকটি কবিতা লিখিত আছে। সেগুলি এরূপ উৎকৃষ্ট যে অতটুকু বালকের লিখিত বলিয়া বােধ হয় না। অনুমান করি, সেগুলি অন্য কোনো স্থান হইতে নকল করিয়া লইয়াছিলাম। তাহাতেও এই প্রমাণ হয় যে, নয়-দশ বৎসর বয়সেও ভালো কবিতা দেখিলেই নকল করিয়া লইতোম। 8