পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਕ ‘বির মাইনে তুই দিতে পারবি নে, কত আর মাইনে ওর ? আগে অচল হোক, তখন ছাডস, একা একা তুই খেটে খেটে মরবি আমি তা দেখতে পারব না। শ্যামা— । এবার মামাকে জিজ্ঞাসা না করিয়াই রাণীকে শ্যামা বিদায় করিয়া দিল । সারাদিন টহল দিয়া সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরিয়া মামা খবরটা শুনিয়া বলিল, তাই কি হয় মা ! এতগুলো ছেলেমেয়ে, একা তুই পারবি কেন ? ওসব বৃদ্ধি করিস নে, এমনি যদি খরচ চলে একটা ঝির খরচও চলবে। আমি ওর মাইনে দেবখন যা । সকালে মামা নিজে গিয়া রাণীকে ডাকিয়া আনিল । বলিল, এমনি তো কাজের অন্ত নেই, বাসনমাজ ঘর-ধোয়ার কাজও যদি তোকে করতে হয় শ্যামা, ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে কে তাকাবে লো, ভেসে যাবে না। ওরা ? এ বুড়ো যদিন আছে, সংসার তোর একভাবে চলে যাবে শু্যামা, কেন তুই ভেবে ভেবে উতলা হয়ে উঠিস ? শ্যামাব চোখে জল আসে। কালতলায় রাণী বাসন মাজিতেছে,-এতক্ষণ ও কাজ তাকেই করিতে ইহঁত, নিজের মামা ছাড়া তাহা অসহ্য হইত। কার ? সংসারে আত্মীয়ের চেয়ে আপনার কেহ নাই। মানুষ করিয়া বিবাহ দিয়াছিল, তারপর কুড়ি বছর দেশবিদেশে ঘুরিয়া আসিয়া আত্মীয় ছাড়া কে মমতা তুলিয়া যায় না ? শ্যামাকে উপার্জনের অনেক পন্থার কথা শুনাইবার পর যে পঞ্চাটি অবলম্বন করা চৈত্র মাসের মধ্যেই মামা স্থির করিয়া ফেলিল শ্যামাকে একদিন তাহার অভাসটুকু আগেই সে দিয়া রাখিয়াছিল। শুভ পয়লা বৈশাখ তারিখে মামা দোকান খুলিল । বড় রাস্তায় গলিব মোড়ের কাছাকাছি ছোট একটি দোকান ঘর খালি হইয়াছিল, বার টাকা ভাড়া । গলি দিয়া বার তিনেক পাক খাইয়া শু্যামার বাডি পৌঁছিতে হয়, একদিন বাড়ি ফিরিবার সময় “এই দোকান ভাডা দেওয়া যাইবে খড়ি দিয়া আঁকাবঁকা অক্ষরে এই বিজ্ঞাপনটি পাঠ করিবামাত্র মামার মতলব স্থির হইয়া গেল। ঘরটি ভাড়া লইয়া মামা মনোহারি দোকান খুলিয়া বসিল । ছোট দোকান, পুতুল, খাতা, পেন্সিল, চা, বিস্কট, লজেঞ্জস, হারিকেনের ফিতা, মাথার কাটা, সিন্দূর এই সব অল্প দামি জিনিসের, দু' বোতল সুবাসিত পরিশোধিত নারিকেল তৈলের বোতলের চেয়ে দামি জিনিস মামার দোকানে রহিল। কিনা সন্দেহ। কাচের কেস আলমারি প্রভৃতি কিনিয়া দোকান দিয়া বসিতে দু'শ টাকার বেশি লাগিল না। মামা দোকানের নাম রাখিল শ্যামা ষ্টেরস। দুশ টাকা মামা পাইল কোথায় ? জিজ্ঞাসা করিলে মামা বলে, শিষ্য দিয়েছে। কেমন শিষ্য জানিস শ্যামা, বোম্বাই শহরের মাৰ্চেণ্ট জুয়েলার-লাখোপতি মানুষ। প্রয়োগে কুম্ভমেলায় গিয়ে হাজার হাজার ছাইমাখা সন্ন্যাসীর Wt 8S মধ্যে গেরুয়া কাপড়টি শুধু পরে গায় একটা কুত চাপিয়ে একধারে বসে আছি, না একরতি ভস্ম, না একটা রুদ্রাক্ষ, জটাফটাতো কস্মিন কালে রাখিনে-ওই,-অত সাধুর মধ্যে লাখোপতি মানুষটা করলে কি, অবাক হয়ে খানিক আমায় দেখলে, দেখে সটান এসে লুটিয়ে পড়ল পায়ে। বলল, বাধা এত বা টা ম্যালের মধ্যে তুমি সাচ্চা সাধু, তোমার ভডং নেই, অনুমতি দাও সাধু সেবা করি। মামা অকৃত্রিম আত্মপ্ৰসাদে চোখ বজিয়া মৃদু মৃদু হাসে । শ্যাশা বলে, তা যদি বল মামা, এখনো তোমার মুখে চোখে যেন জ্যোতি ফোটে মাঝে মাবো । কিছু পেয়েছিলে মামা, সাধনার গোড়ার দিকে সাধুরা যা পায় টায়, ক্ষেমতা না কি বলে কে জানে বাবু-তাই কিছু ? মামা নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, পাই নি ?--ছেড়েছুড়ে দিলাম বলে, লেগে যদি থাকতাম শ্যামা দোকান কবার টাকাটা। তবে ভক্তই দিয়াছে ? শ্যামার সেই হাজাব টাকায় স্থাত পড়ে নাই ? শ্যামার মন খুতখুতে কবে । কুড়ি বছর অদৃশ্য থাকিবার রহস্য আবরণটি এক সঙ্গে বাস করিতে করিতে মামার চারিদিক হইতে খসিয়া পড়িতেছিল, শ্যামা যেন টের পাইতেছিল। দীর্ঘকাল দেশবিদেশে ঘুরিলেই মানুষের কতগুলি অপার্থিব গুণের সঞ্চার হয না, একটু হয়ত খাপছাড়া স্বভাব হইয়া যায় তার বেশি আর কিছু নয়, বিনা সঞ্চয়ে ঘুরিয়া বেড়ানো ছাড়া হয়ত এসব লোকের দ্বারা আর কোন কাজ হয় না । মামা যে এমন একটি ভক্তকে বাগাইয়া রাখিয়াছে চাহিলেই যে দু’চারশ টাকা দান করিয়া বসে, শ্যামার তাহা বিশ্বাস করিতে অসুবিধা হয় । তেমন জবরদস্ত লোক তো মামা নয় ? একদিন সন্ধ্যার পর চাদরে গা ঢাকিয়া শ্যামা দোকান দেখিয়া আসিল । দোকান চলিবে ভরসা হইল না । শ্যামা-ষ্টোরস এর সামনে রাস্তার ওপারে মস্ত মনোহারি দোকান, চারপাঁচটা বিদ্যুতের আলো, টিমটিমে কেরাসিনের আলো জ্বালা মামার অতটুকু দোকানে কে জিনিস কিনিতে আসিবে ? মামার যেমন কাণ্ড, দোকান দিবার আর যায়গা পাইল না। মামার উৎসাহের অন্ত নাই, বিধান ও খুকী দোকান দোকান করিয়া পাগল, মণিরও দুবেলা দোকানে যাওয়া চাই। মামা ওদের বিস্কুট ও লজেঞ্জস্য দেয়, দোকানের আকর্ষণ ওদের কাছে তাহাতে আরও বাড়িয়া গিয়াছে। জিনিস বিক্রয় করিবার সখ বিধানের প্রচণ্ড । বলে এবার যে খদের আসবে তাকে আমি জিনিস দেব দাদু, এ্যা ? মামা বলে, পারবি কি খোকা, খদের বিগড়ে দিবি শেষে । কিন্তু অনুমতি মামা দেয়। বিধান ছোট শো-কেসটির পিছনে টুলটার উপরে গম্ভীর মুখে বসে, মামা কোণের বেঞ্চিটর উপর বসিয়া চশমা চোখে দিয়া বিড়ি টানিতে টানিতে খবরের DBKK TBLDD S SBY S DBL DBBD L0 KBD SDDS ঈর্ষার দৃষ্টিতে বিধানের দিকে চাহিয়া বলে, কি রে বিধু!-