পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSo মানিক-গ্ৰন্থাবলী মার্জিত জীবনযাত্রার পথে বিনা চেষ্টায় পিছলাইয়া চলিবার মত মোলায়েম হইতে পারে নাই। স্তর কে, এল-এর বাড়ীর সদরের সুশ্ৰী দরজাটি পার হইয়া ভিতরে পা দেওয়া মাত্র টের পাওয়া যায়, বাহিরের রাস্তাটা কি নোংরা। কতবার রাজকুমার এ দরজা পার হইয়াছে কিন্তু একবারও দরজাটি পার হওয়ার একমুহূৰ্ত্ত আগে এই অভিজ্ঞতা তার মনে পড়ে না। স্যার কে, এল-এর বাড়ীর ভিতরটা শুধু দামী ও সুশ্ৰী আসিবাবে সুন্দরভাবে সাজানো নয়, সদর দরজার এপাশে এবাড়ীর বিস্ময়কর রূপ ও শ্ৰীর মহিমাটাই শুধু স্পষ্ট হইয়া নাই, কি যেন একটা ম্যাজিক ছড়ানো আছে চারিদিকে,- পার্থক্য ও দূরত্বের ইঙ্গিতভার এক অহঙ্কাৱী আবেষ্টনীর দুৰ্বোধ্য প্রভাবের ম্যাজিক । বাড়ীতে ঢুকিলেই রাজকুমার একটু বিমাইয়া যায়। একটা অদ্ভুত কথা তার মনে হয়। মনে হয়, অনেকদিন আগে একবার এক পাহাড়ে একজন সংসারত্যাগী কৌপানধারী সন্ন্যাসীর গুহায় ঢুকিয়া তার যেমন গা ছমছম করিয়াছিল, এখানেও ঠিক তেমনি লাগিতেছে। আরাম উপভোগের আধুনিকতম কত আয়োজন। এখানে, তবু তার মনে হয় এ বাড়ীতে যারা বাস করে তারা যেন ধূলামাটির বাস্তব জগতকে DBDDB DBBBDDS BBOBDLDBD DBDD DBBDB DDD সাধারণ স্বাভাবিক জীবনকে এড়াইয়া চলিতেছে। উপরে গিয়া রাজকুমার টের পাইল, রিণি বড় হল ঘরে গান গাহিতেছে। আজ পার্টিতে যে গানটি গাহিবে খুব সম্ভব সেই গানই প্র্যাকটিস করিতেছে। ঘরে গিয়া রাজকুমার রিণির কাছে দাড়াইয়া গান শুনিতে লাগিল। বড় কোমল গানের কথাগুলি, বড় মধুর গানের সুরটি । রাজকুমার হয়তো একটু মুগ্ধ হইয়া যাইত, কিন্তু সে আসিয়া দাড়াইয়াছে টের পাইয়াও রিণি টের না পাওয়ার ভান করিয়া আপন মনে গাঁহিয়া চলিতেছে বুঝিতে পারিয়া গানটা আর রাজকুমারের তেমন ভাল লাগিল না। গান শেষ করিয়া রিণি মুখ তুলিল। রাজকুমারের উপস্থিতি টের ” ইয়াও টের না পাওয়ার ভান করিয়া এতক্ষণ গান করুক, ভাবাবেশে কি আ রূপ দেখাইতেছে রিণির মুখ । এ গানটা গাইলেই আমার এমন মন কেমন করে। মনে হয়। আমি যেন এক, আমি যেন ধীরে ধীরে রাজকুমারের হাত ধরিয়া রিণি তাকে আরেকটু কাছে টানিয়া আনিল, নিজের মুখখানা আরও উচু করিয়া ধরিল তার মুখের কাছে। গান গাহিয়া সে সত্যই বিচলিত হইয়া পড়িয়াছে। রাজকুমারের কাছে আর কোনদিন সে এভাবে আত্মহারা হইয়া পড়ে নাই। প্রথমটা রাজকুমার বুঝিতে পারে নাই, তবে রিণির চোখ ও মুখের আহবান এত স্পষ্ট যে বুঝিতে বেশীক্ষণ সময় লাগা রাজকুমারের পক্ষেও সম্ভব ছিল না। বুঝিতে পারিয়াই সে বিবৰ্ণ হইয়া গেল। ना, छेि। V9 রিণি উঠিয়া দাড়াইয়া একটু তফাতে সরিয়া গেল। চোখে আর আবেশের ছাপ নাই, মুখে উত্তেজনার রঙ নাই। চোখের পলকে সে যেন পাথরের মুক্তি হইয়া গিয়াছে। কি চাই আপনার ? কিছু চাই না, এমনি তোমায় একটা কথা বলতে এসেছিলাম। আমার বড় মাথা ধরেছে, আজ আর তাই তোমার সঙ্গে পার্টিতে যেতে পারব না । রিণি বলিল, তা নিজে অসভ্যতা করতে না এসে, একটা নোট পাঠিয়ে দিলেই পারতেন ? য়াকগে, মাথা যখন ধরেছে, কি করে আর যাবেন । রাজকুমার মরিয়া হইয়া বলিল, তোমার সঙ্গে বসে একটু গল্প করব ভেবেছিলাম রিণি ! রিণি যেন আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল -আমার সঙ্গে গল্প । আচ্ছা বলুন। গল্প তাই জমিল না। একজন যদি মুখ ভার করিয়া বসিয়! থাকে আর থাকিয়া থাকিয়া সুকৌশলে অতি সূক্ষ্ম ও মার্জিত ভাবে খোচা দিয়া জানাইয়া দেয় যে অপর জন মানুষ হিসাবে অতি অভদ্র, গল্প আর চলিতে পারে কতক্ষণ ? কয়েক মিনিট পরেই রাজকুমার উঠিয়া গেল। বিদায় নিয়া রাজকুমার তো ঘরের বাইরে চলিয়া আসিল, সঙ্গে সঙ্গে রিণি আবার আরম্ভ করিয়া দিল তার গানের প্র্যাকটিস। রাজকুমার তখন সবে সিঁড়ি দিয়া কয়েক ধাপ নামিয়াছে। রিণির গানের সেই অকথ্য করুণ সুর কাণে পৌছানাে মাত্র সে থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িল। এত তাড়াতাড়ি রিণি নিজেকে সামলাইয়া উঠিতে পারিয়াছে ! সে তবে লজ পায় নাই, অপমান বোধ করে নাই, বিশেষ বিচলিত হয় নাই ? ব্যাপারটা রাজকুমারের বড়ই খাপছাড়া মনে হইতে লাগিল। সাগ্রহে মুখ বাড়াইয়া দিয়া চুম্বনের বদলে ধিক্কার শোনাটা এমনভাবে তুচ্ছ করিয়া দেওয়া তো মেয়েদের পক্ষে স্বাভাবিক নয় । রেলিং ধরিয়া সেইখানে দাড়াইয়া রাজকুমার ভাবিতে থাকে। তার ব্যবহারকে রিণি অসভ্যতা বলিয়াছিল। লজ্জা পাওয়ার বদলে সমস্তক্ষণ রিণির কথায় ব্যবহারে ও চোখের দৃষ্টিতে একটা অবজ্ঞা মেশানো অনুকম্পার ভাবই স্পষ্ট হইয়া ছিল। তখন রাজকুমার ভাবিয়াছিল, ওসব প্ৰত্যাখ্যানের প্ৰতিক্রিয়া। এখন তার মনে হইতে লাগিল, তার মনের সঙ্কীর্ণতার পরিচয় পাইয়া প্ৰথমে একটু রাগ এবং তারপর বিরক্তি ও অনুকম্পা বোধ করা ছাড়া আর কোন প্ৰতিক্রিয়াই বোধ হয় রিণির মনে ঘটে নাই। শ্ৰীমতী গিরিন্দ্ৰনন্দিনী ও তার মাকে আজ যেমন তার বর্বর মনে হইয়াছিল, তার সম্বন্ধেও রিণির ঠিক সেই রকম একটা ধারণাই সম্ভবত 响邵k该山 እ8እ