পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতু কোণ SGC যা না, বলগে না তুই তোর রাজুদা'কে ? তা মেয়ে বলে করার বিরুদ্ধে কালীর প্রতিবাদ যেমন রাজকুমারের অজ্ঞাত কি, লজ্জা করে দিদি । জলের গেলাস তুলিয়া রাজকুমার গোলাসের অৰ্দ্ধেকটা খালি করিয়া ফেলিল । খাওয়ার পর অন্ধকার ঘরে চেয়ারে বসিয়া রাজকুমার সিগারেট টানিতেছে, দরজার কাছে বিছানো বারান্দার বালবের আলোয় একটি ছায়া আসিয়া পড়িল। ছায়া আর নড়ে না । মনোরমার ছায়া নিশ্চয় নয় । ছায়া ফেলিয়া কারো ঘরের বাহিরে দরজার পাশে দাড়াইয়া থাকার ধৈৰ্য্য नांद्ममांद्र नांशे । রাজকুমার সাড়া দিতেই কালী ঘরে আসিল । মসলা নিন। প্ৰতিফলিত আবছা আলোয় হাত বাড়ানো দেখা যায়। রাজকুমারের হাতের তালুতে মনোরমার সযত্নে প্ৰস্তুত মসলা দিয়া কালী বলিল, আঁধার দেখে এমন ভয় করছিল । জানি আপনি আছেন, তব ভাবছিলাম, যদি না থাকেন ? আঁধারে আমি বডড ডরাই । আলোটা জালো । জালবো ? কালী বোকা নয়, কিছু শুধু জানে না । ইঙ্গিতে ও সঙ্কেতের ভাষা এখনো শেখে নাই। মালতী সরসী বা রিণি যদি ছুটিয়া ঘর ছাড়াইয়া চলিয়া যাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া এভাবে ইতস্ততঃ করিয়া জিজ্ঞাসা করিত জালবো ?-একটি শব্দে কি মহাকাব্যই সৃষ্টি হইয়া যাইত । কালী শুধু প্রশ্নের ভঙ্গিতে তার কথারই পুনরাবৃত্তি করিয়াছে। আলো জ্বালিয়া কালী চলিয়া গেল রাজকুমার ভাবে, অভিধান নিরর্থক । শব্দের মানে তারাই ঠিক করে, যে বলে আর যে শোনে। কাজ ও উদ্দেশ্যের বেলাতেও তাই। কি ব্যাপক মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ! বর্ষা শেষ হইয়াছে। মাঝে মাঝে বাতাসে হঠাৎ যে শীতের আমেজ পাওয়া যায় এখনো তা ভিজা ভিজা মনে হয়, কান্নার শেষে তোয়ালে দিয়া মুছিয়া নেওয়ার পর মালতীর গায়ের শীতল স্পর্শের মত। কালী মার কাছে চলিয়া গিয়াছিল, কয়েকদিনের জন্য আবার আসিয়াছে। মনোরমার তাড়া নাই, বিফল হওয়ার ভয়ও বেন নাই। কালীর দেহে যৌবনের বিকাশে যেমন এতটুকু ৰ্যস্ততা দেখা যায় না। অথচ বিকাশ তার অনিবাৰ্য্য গতিতে ঘটিতেই থাকে, মনোরমার অভিযানও তেমনি ধীর স্থির মন্থর গতিতে গড়িয়া উঠে। খেলার ছলে হৃদস্পন্দন পৰীক্ষা IRQ সারেই তিলে তিলে হুকুম হইয়া মাথা তুলিতে আরম্ভ করে, তাকে ঘিরিয়া মনোকুমার জাল বোনাও তেমনি হইয়া থাকে তার অদৃশ্য। কালীকে মনোরমা কখনো বেশী সাজায় না, তার ঘরোয়া সাধারণ সাজেই বৈচিত্ৰ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে । কালীর একরাশি কালো চুল আছে, কোনদিন মনোরমা লম্বা বিনুনী ঝালাইয়া দেয়, কোনদিন রচনা করে ফুলানো ফাপানো খোপা । সকালে ঘরের কাজ করার সময় কালীর গায়ে সাদাসিধে ভাবে জড়ানো থাকে নিমন্ত্রণে যাওয়ার জমকালো দামী শাড়ী, বিকালে সযত্ন প্রসাধনের পর তাকে পরিতে হয়। সাধারণ মিলের কাপড় । সকালে কালী কাতর হইয়া বলে, ভাল কাপড়খানা নষ্ট হয়ে যাবে যে দিদি ? মনোরমা বলে, হোক । আচলটা জড়া দিকি কোমরে, ঘর দোর ঝাঁট দে রাজুর। খাটের তলাটা ব্যাটাস ভাল করে। বিকালে আরও বেশী কাতর হইয়া কালী বলে, এটা নয় দিদি, পায়ে পড়ি তোমার, ওটা পড়ি এখন, আবার খুলে রাখব। একটু পরে ? মনোরমা বলে, না, অত ফ্যাশন করে কাজ নেই তোমার। গরীবের মেয়ে গরীবের মত থাকো । কাছে টানিয়া আদর করিয়া বলে, বোকা মেয়ে, ছোড়া কাপড়ে তোকে যে বেশী সুন্দর দেখায় রে । রাজকুমারের কাছে, সে আপশোষ করে, বড় চপল মেয়েটা রাজু, বড় চঞ্চল। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলে, তাও বলি, মেয়ে যেন মানুষের মন কাড়তে জন্মেছে। কি দিয়ে এমন মায়া লাগায় ছুড়ি ভগবান জানেন। ডাইনী এসে জন্মায়নি তো মানুষের পেটে ? ক’দিনের জন্যে তো এসেছে, সেখানে পাড়াশুদ্ধ সবাই অস্থির, রোজ সবাই জিজ্ঞেস করে, কালী কবে ফিরবে: গো কালীর মা ? যদুবাবু মন্ত বড়লোক ওখানকার, বংশ একটু নীচু, তার গিন্নি মাসীকে এখন থেকে সাধাসাধি করছে, ছেলে বিলেত থেকে ফিরলে কালীকে আমায় দিও কালীর মা । তবে তো কালীর বিয়ের জন্য কোন ভাবনাই নেই। কে ভাবে ওর বিয়ের জন্য ? মনোরমার কাছে এসব শোনে আর কালীকে রাজকুমার একটু মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করে। তার মনে হয়, কেবল কথাবাৰ্ত্তা চালচলন শিক্ষা-দীক্ষার দিক হইতে নয়, কালীর গড়নটি পৰ্য্যন্ত যেন ঘরোয়া ছাঁচের, বহুকাল আগে মিসেস বেলনসের আঁকা। গত শতাব্দীর বাঙ্গালী নারীর ছবির আদর্শে কালীর দেহ গড়িয়া উঠিতেছে। এরকম মনে হয় কেন ? সাজ পোষাকের এমন কোন নূতনত্ব তো কালীর নাই যে জম্ভ এরকম একটা ধারণা জনিত