পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু

উপলক্ষে অনেক জায়গা থেকে আত্মীয়-কুটুম্বের দল এসেছে, তার মধ্যে দুটি শহর অঞ্চলের চালাক চতুর জ্যাঠা ছেলে আমার বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠল। আরও এত ছেলে থাকতে তারা আমাকেই অপ্রতিভ কোরে কেন যে এত আমোদ পেতে লাগল, তা আমি আজও ঠিক বুঝতে পারি না।

 একটি ছেলের বয়স বছর পনের হবে। রং ফর্সা, ছিপ্‌ছিপে, সিল্কের পাঞ্জাবি গায়ে—নাম ছিল যতীন, নামটা এখনও মনে আছে। সে আমাকে বললে—কি পড়?

 আমি বললাম—মাইনর সেকেণ্ড ক্লাসে পড়ি।

 সে বললে—বলত হাঁচি মাইনাস কাসি কত?

 প্রশ্ন শুনে আমি অবাক্‌।

 বাঙ্গালা স্কুলে পড়ি, “মাইনাস্‌" কথার মানে তখন জানিনে। তা ছাড়া একি অদ্ভুত প্রশ্ন! আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে সে অমনি আবার জিজ্ঞাসা করলে—"হবগবলিন" মানে কি?

 আমি ইংরাজী পড়ি বটে কিন্তু সে সুশীল ও সুবোধ আবদুলের গল্প, দারোয়ান ও জেলের গল্প, বড় জোর গুটীপোকা ও রেশমের কথা। সে সবের মধ্যে ঐ অদ্ভুত কথাটা নেই। লজ্জায় লাল হয়ে বললুম—পারবনা।

 কিন্তু তাতেও আমার রেহাই নেই। ভগবান সেদিন লোক সমাজে আমাকে নিতান্ত হেয় প্রমাণিত করতেই বোধ হয় যতীনকে ওদের বাড়িতে হাজির করেছিলেন। সে দু' হাতের আঙ্গুলগুলো প্রসারিত ক'রে আমার সামনে দেখিয়ে বললে—এতগুলো কলা যদি এক পয়সা হয় তবে পাঁচটা কলার দাম কত?