পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৪

বয়স হয়েছে হাজরা মশাই, এ বয়সে আর আপনার চাকরি করা পোষাবে না, আসল কথা আমাদের আর চায় না। ভালো জিনিসের দিন আর নেই, বাবু মশায়। এখানকার কালে সব হয়েছে মেকি। মেকির আদর এখন খাঁটি জিনিসের চেয়ে বেশি। আমার গুরু ছিলেন বৌ-মাষ্টারের দলের ভৃগু সরকার, আজকালকার কোন্ ব্যাট। অ্যাক্‌টার ভৃগু সরকারের পায়ের ধুলোর যুগ্যি আছে? ‘রাই উন্মাদিনী’ পালায় আয়ানঘোষের পার্টে যে একবার ভৃগু সরকারকে দেখেচে—

 আরও বার কয়েক প্রশংসা করে এই ভগ্নহৃদয় বৃদ্ধ নটকে শান্ত করলুম। জিজ্ঞাসা ক’রে ক্রমশ জানলুম এই মশলার দোকানই বৃদ্ধের বর্তমান আশ্রয় স্থল। কাছেই গলির মধ্যে কোন ঠাকুরবাড়িতে এক বেলা খেতে দেয়, রাত্রে এই দোকানটাতে শুয়ে থাকে। দোকানের মালিক বোধ হয় ওর জানাশোনা।

 কার্যোপলক্ষে গলিটা দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করি, আর ফিরবার সময়ে যদু হাজরার সঙ্গে একটু গল্প-গুজব করি। একদিন বৃদ্ধ বললে—বাবু মশাই, একটা কথা বলব? একদিন একটু মাংস খাওয়াবেন? কতকাল খাইনি।

 একটা ভালো রেস্টোরেণ্টে তাকে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালুম। ওর খাওয়ার ভঙ্গি দেখে মনে হ’ল, বৃদ্ধ কতদিন ভালো জিনিস খেতে পায়নি। তারপর দুজনে একটা পার্কে গিয়ে বসলুম। রাত তখন ন’টা বেজে গিয়েছে। শীতকাল, অনেকে পার্ক থেকে চলে গিয়েছে। একটা বেঞ্চে বসে বৃদ্ধ নিজের সম্বন্ধে কত কথাই বললে। কোন্ জমিদার কবে তাকে আদর করে ডেকে নিজের হাতে সোনার মেডেল পরিয়ে দিয়েছিলেন, তার অভিনয়