পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩
জন্ম ও মৃত্যু 

 শশী-ঠাকরুণের অন্য ছেলেরা কখনো সন্ধান নিত না—বুড়ী বাঁচল, কি মোলো। অথচ তাদের সকলেরই অবস্থা ভালো—মাইনে কেউই মন্দ পায় না, শহরে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকে। বড় ভাইয়ের পত্রের জবাব দিত—তাদের নিজেদেরই অচল হ’য়েছে, শহরের খরচ থেকে বাঁচিয়ে বাড়িতে কি ক’রে পাঠায়। বাড়িতে বিষয়-সম্পত্তি তো রয়েছে—তার আয় থেকে তো মায়ের চলা উচিত—ইত্যাদি। কিন্তু বিষয়-সম্পত্তি এমন কিছুই না যার আয় থেকে বেকার বড় ছেলের একপাল পোষ্য ও শশী-ঠাকরুণের ভরণ-পোষণ ভালো ভাবে চলে।

 বুড়ী খেতেই পেত না। ইদানীং আবার তার ছেলেমানুষের মতো লোভ দেখা দিয়েছিল—বিশেষ ক’রে মিষ্টি জিনিস খাবার! আমি সেবার যখন দেশে যাই, বুড়ী দেখি একটা কঞ্চির লাঠি হাতে মুখুয্যে পাড়ার মোড়ে বেলতলায় বসে। আমায় দেখে বললে, কুঞ্জ এলি নাকি?

 —হাঁ, ঠাক্‌মা। এখানে ব’সে কেন?

 —এই বাদা বোষ্টম খাবার বেচতে যাবে, তাই ব’সে আছি তার জন্যে। বাতাসা কিনব —ভিজিয়ে খাই।

 তা বেশ, বসো। ভালো আছ তো?

 —আমাদের আবার ভালো থাকা থাকি, তুমিও যেমন দাদা। খেতেই পাইনে। বাদার কাছে চারটে পয়সা ধার হ’য়েছে, আর সে ধার দিতে চায় না। সিধুর কাছে আর কত চাইব? সে নিজের ছেলেপিলে নিয়ে আথান্তরে পড়ে আছে। আহা, বাছার আমার মুখ দেখলে বুক ফেটে যায়। আমি তার কাছে কিছু নিই নে।—তা তুই আমাকে আনা চারেক পয়সা দিয়ে যাবি?