পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৮

এই উৎসবের দিনে কি ভাবে পাড়া যায়? বা কতক্ষণ ধ’রে জন্মতিথিতে মঙ্গলেচ্ছা প্রকাশ সংক্রান্ত কথাবার্তা বলবার পরই বা কাজের কথা পাড়া সুষ্ঠু হবে—কিংবা আজকার দিনে বাড়ি ভাড়ার দরদস্তুররূপ ইতরজনোচিত কথাবার্তা বলা আদৌ শোফন হবে কি-না—ইত্যাদি মনে মনে তোলা-পাড়া করছি এমন সময়ে একটি সুন্দরী তরুণী হাসি মুখে বড় একটা ফুলের তোড়া হাতে ঘরে ঢুকলেন, পেছনে একটি যুবক। গৃহকর্তা ব’লে উঠলেন—এই যে অরুণা এসেছিস্ দিদি—ওঃ, পেছনে যে নির্মলকে গাঁটছড়া বেঁধে এনে হাজির করেছিস্—ছেড়ে আসা যায় না বুঝি? বেশ বেশ, আমরা হয়ে গিয়েছি এখন বুড়োসুড়ো—

 তরুণী ফুলের তোড়াটি বৃদ্ধের হাতে দিয়ে প্রণাম ক’রে এবং হাসি মুখে বৃদ্ধের গালে দুটি ঠোনা মেরে ঘর থেকে বার হ’য়ে গেল, যুবকটিও গেল পেছনে পেছনে। বললেন—আমার নাতনী—আমার বড় ছেলের মেয়ে। আই, এ পাস—ও বছর বিয়ে হয়েছে—স্বামী ইঞ্জিনিয়ার, বিলেত ফেরত, কর্পোরেশনে ভালো চাকরি পেয়েছে।

 কথা তখনও ভালো ক’রে শেষ হয়নি, আর দুটি তরুণী ঘরে ঢুকল—এদের ঘাড়ের উপর এলোখোপা এলিয়ে পড়েছে—পরনে জামিয়ারের মতো ছোট কল্কার কাজ করা নীল শাড়ি ও ব্লাউজ, গলায় সরু মফ্‌চেন, পায়ে সোনালী জরীর কাজ করা নাগরা। দুইটিই অবিবাহিতা—একটি গৌরী, অপরটি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা। এরাও ফুলের তোড়া দিলে—গৌরী মেয়েটি ঝিনুকের কাজ করা একটি নস্যদানী বৃদ্ধের হাতে দিয়ে বললে—বাবা পাঠিয়েছেন কুন্নুর থেকে—মা আসতে পারলেন না এখন—রাত্রে আবার থিয়েটারে যাবেন।