পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফলে গ্রামের মধ্যে টাকাপয়সার লেনদেন কম‍্তির দিকে, সমাজজীবন প্রাণহীন, নীরস।

আরেক রকমের পালাপার্বণে সমাজের লোক যোগ দেয় আরো বেশি। সে হচ্ছে বারোয়ারী পুজো। কিন্তু তারও দিল ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। ১৯১৭ সালে আমরা নানান দিক ডেবে এক বারোয়ারী পুজোর আয়োজন করলাম। ধুমধাম হল প্রচুর, লোকের উৎসাহ দেখে অন্যান্য বছরও এ ব্যবস্থা বহাল রইল।

মনের দিক থেকে এ সময় আমার অগ্রগতি হয় যে বিষয়ে সেটা হচ্ছে আত্মবিশ্লেষণের অভ্যাস। বহুকাল ধরে এ অভ্যাস আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে রয়েছে, এবং সুফল দিয়েছে প্রচুর। আর কিছু নয়, নিজের মনের উপর সন্ধানী আলো ফেলে তাকে ভালো করে দেখবার চেষ্টা করা। রোজ রাত্রে ঘুমের আগে বা ভোরে ঘুমভাঙার পর খানিকটা সময় আত্মচিন্তায় কাটাতাম। দুরকমের বিশ্লেষণ এর অঙ্গ ছিল—এক বর্তমানের যে আমি, তার বিশ্লেষণ, আরেক আমার সমগ্র জীবনের বিশ্লেষণ। প্রথমটা থেকে জানা যেত আমার মনের কামনা-বাসনা, আদর্শ-আকাক্ষা; দ্বিতীয়টা থেকে আমার জীবনকে ভালো করে চিনতাম, তার বিকাশকে প্রত্যক্ষ করতাম। অতীতের ব্যাকুলতার চিন্তা দিয়ে উপলব্ধি করতাম অতীতের ভ্রান্তি, ভবিষ্যতের পথ।

আত্মবিশ্লেষণে বেশি দিন যাবার আগেই নিজের পক্ষে অতি গ‍ুর‍ুত্বপূর্ণ দুটি তথ্য আবিষ্কার করলাম। এক, নিজের মন সম্বন্ধে এতদিন কত অজ্ঞ ছিলাম, জানিনি আমার মনের গোপন অন্ধকারে কত জঘন্য প্রবৃত্তি সাধ বেশ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুই, যে মুহূর্তে নিজের অন্তর্নিহিত হীনতাকে জেনেছি সেদিনই তাকে অর্ধেক জয় করা হয়ে গেছে। মনের দুর্বলতা দেহের রোগের মত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত

১০৯