পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বেছে বেছে ভালো ছাত্রদের আমাদের দলভুক্ত করা হত, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পিত প্রতিষ্ঠানে ভালো অধ্যাপকের অভাব না হয়। দলের সকলেই আমরা ব্রহ্মচর্যের ব্রত নিয়েছিলাম। দলের নেতৃস্থানীয়েরা সকলকে আগে থেকেই বলে দিতেন—এক সময়ে না এক সময়ে পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ঘটবেই। তাই বলে অবিশ্যি গোড়া থেকেই পরিবারের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নির্দেশ দেওয়া হত না। কিন্তু আমরা যেভাবে চলাফেরা করতাম তাতে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রায় অনিবার্য ছিল। ছুটির দিনে প্রায়ই বাড়ি থাকতাম না, অভিভাবকদের অনুমতি নেবারও প্রয়োজন বোধ করতাম না। কখনো কখনো বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের মঠ বা ঐ জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে দল বেঁধে বেড়াতে যেতাম। কখনো নামকরা লোকদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম—১৯১৪ সালে আমরা কবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যাই, সে সময়ে তিনি পল্লীসংস্কার সম্বন্ধে আমাদের নানা উপদেশ দেন। কংগ্রেস তখনো পল্লীসংগঠনের কাজে হাত দেয়নি। আগেই বলেছি নানা জায়গায় আমাদের দলভুক্ত লোক ছিল। মাঝে মাঝে তাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণ আসত। একটা দিন তাদের সঙ্গে কাটিয়ে আসতাম। কলেজের বাইরে আমার বেশি সময়ই কাটত দলের ছেলেদের সঙ্গে। বাড়ির প্রতি আমার কোনো আকর্ষণই ছিল না—আমার আদর্শের সঙ্গে বাড়ির ধারার কোনো মিল খুঁজে পেতাম না। ঘর ও বাইরের এই দোটানায় পড়ে চিরকালই আমি বড় অশান্তি ভোগ করেছি। বিশেষ করে আমার আদর্শ বা কার্যকলাপ সম্বন্ধে যখন বাড়িতে বির‍ূপ সমালোচনা হত মন বেদনায় ভরে উঠত। রাজনীতির দিক থেকে আমাদের দল সবরকম সন্ত্রাসবাদী বা ষড়যন্ত্রম‍ূলক কার্যকলাপের বিপক্ষে ছিল। এজন্য ছাত্রমহলে আমরা

৭৪