পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গেছে নিষ্পাপ শিশ‍ুর মতোই তিনি তাদের প্রতি নির্বিকার, নিরাসক্ত ব্যবহার করেছেন। এসব ক্ষেত্রে তাঁর মনে সম্পূর্ণ অযৌনপ্রকৃতির প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। রামকৃষ্ণ সর্বদা বলছেন সাধনার পথে সবচেয়ে বড় বিঘ্ন হচ্ছে কামিনী এবং কাঞ্চন। রামকৃষ্ণের এই বাণী আমি সত্য বলে মেনে নিয়েছিলাম।

গোড়ার দিকে রামকৃষ্ণের উপদেশ অনুযায়ী চলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল—যৌনপ্রবৃত্তি দমন করবার জন্য আমি যত বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতাম প্রব‍ৃত্তির তীব্রতাও যেন ততই বেড়ে যেত। কতকগুলি যোগাসন এবং বিশেষ প্রক্রিয়ার ধ্যানের সাহায্যে যৌনসংযম আমার কাছে সহজসাধ্য হয়ে এসেছিল এবং আমি নিজেকে বেশ নিরাসক্ত করে এনেছিলাম। কিন্তু নিরাসক্তি বলতে রামকৃষ্ণ যাতে বিশ্বাস করতেন সে আমার কাছে একেবারে অসম্ভব বলে মনে হত। যাই হোক, হাল না ছেড়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করেছিলাম। কখনো আসত হতাশা, কখনো অনুশোচনা। সে সময়ে একবারও মনে হয়নি যে যৌনপ্রব‍ৃত্তিটা মানুষের পক্ষে কতখানি স্বাভাবিক। রামকৃষ্ণের আদর্শকে জীবনের মুলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে তখন আমি আজীবন ব্রহ্মচারী থাকবার সাধনায় রত।

মানুষের স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তিকে দমন করবার জন্য এত সময় ও শক্তির অপচয়ের কোনো সার্থকতা আছে কি না এ সম্বন্ধে আজকের সিনে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে। কৈশোর এবং যৌবনে ব্রহ্মচর্য পালনের অবশ্যই প্রয়োজন আছে, কিন্তু রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মতে যৌনচেতনাকে চিরকালের মতন সম্পূর্ণভাবে দমন করা উচিত। আমাদের শরীর ও মনের বল তো আর অপর্যাপ্ত নয়। এক্ষেত্রে যৌনপ্রব‍ৃত্তি দমনের অসাধ্যসাধনে সময় ও শক্তির এত অপচয় সত্যিই

৬৮