পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই দাবিতে কান দেবার মেজাজ কারুরই ছিল না, গোলমালটা মিটে গেল ভালো করে শুরু হবার আগেই। আমার যেটা চোখে লাগল সেটা হচ্ছে এই যে উঁচুজাতের ছাত্ররা মাঝিকে নিয়ে আপত্তি তোলেনি, আপত্তি তুলল কি না চাকরটা, যে নিজেই যথেষ্ট নিচু জাতের লোক! এ ব্যাপাৱের অল্পদিন পরেই মাঝি টাইফয়েডে পড়ল। আমরা বিশেষভাবে এর সেবাযত্ন শুরু করলাম। আনন্দে বিস্ময়ে অভিভূত হলাম যখন মা এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন।

সময় কাটাবার জন্য বন্ধুবান্ধব নিয়ে বিভিন্ন তীর্থস্থান ও বিখ্যাত ঐতিহাসিক জায়গাগ‍ুলি পরিদর্শন করতে শুরু করলাম। খোলা হাওয়া ও যথেষ্ট হাঁটাচলা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, তাছাড়া তাতে অপরের অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য লাভের যে সুযোগ মেলে সেটা ঘরের ভিতরে পাবার নয়। ঘরবন্দী জীবনের অখণ্ড আলস্য থেকেও পালিয়ে বাঁচলাম, বইপড়া বা যোগাভ্যাসের প্রতি কোনো আকর্ষণ আর ছিল না। দেশী পুজো-পার্বণের মধ্য দিয়ে দলকে গড়ে তোলার এক পরীক্ষায় নামলাম। আমাদের পুজো-পার্বণ চিরকালই গোটা সমাজের উৎসব। যেমন ধরা যাক দূর্গাপজা। নিছক পূজাটা যদিও পাঁচ দিনের ব্যাপার তবু তার ব্যবস্থা বন্দোবস্তে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটে, সব জাতের, সব ব্যবসার লোকই কাজে লাগে কোনো না কোনো দিকে। এক বাড়িতে পুজো হলেও গোটা গ্রামটা তাতে যোগ দেয়, এমন কি দুপয়সা উপায়ও করে নিতে ছাড়ে না। আমার ছেলেবেলার গ্রামে পুজোর শেষদিনে যে যাত্রা হত তাতে জমায়েৎ হত গ্রামের ছেলেবুড়ো সবাই। গত পঞ্চাশ বছরে গ্রাম্য লোকের দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, প্রবাসী হয়েছে বহুলোক, পুজো-পার্বণের আর সে ধ‍ুমধাম নেই। কোথাও কোথাও সে পাট একেবারেই চুকে গেছে।

১০৮