পোকা-মাকড়/এত প্রাণিহত্যা কেন হয়?

উইকিসংকলন থেকে

এত প্রাণিহত্যা কেন হয়?

 পৃথিবীতে প্রাণিশূন্য স্থান নাই; জল, স্থল, আকাশ সকলি প্রাণীতে পূর্ণ। তবুও বিধাতা যে কেন এই প্রকারে বহু প্রাণীর সৃষ্টি করিয়া তাহাদিগকে মৃত্যুর মুখে ফেলিয়া দেন, তাহা হঠাৎ বুঝা যায় না। কিন্তু তোমরা যদি একটু চিন্তা করিয়া দেখ, তাহা হইলে বিধাতার উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিবে। বিধাতা নিষ্ঠুর নয়,—সমস্ত প্রাণীর মঙ্গলের জন্যই জন্ম-মৃত্যু পৃথিবী জুড়িয়া চলিতেছে।

 জল, বাতাস ও মাটির সার অংশ খাইয়া গাছপালা বাঁচিতে পারে, কিন্তু প্রাণীরা তাহা পারে না। তাহাদের বাঁচিয়া থাকার জন্য লতাপাতা চাই, পোকা-মাকড় চাই এবং কাহারো কাহারো জন্য মাংসও চাই। অধিকাংশ পাখীই কীট-পতঙ্গ খাইয়া বাঁচে,—বাঘ, সিংহ ইত্যাদির প্রধান খাদ্য মাংস। কাজেই বংশ-রক্ষার জন্য যত নূতন কীট-পতঙ্গের দরকার, ঠিক্ ততগুলি সন্তানই যদি জন্মিত, তবে পাখীরাই সেগুলিকে খাইয়া শেষ করিয়া দিত,—ইহাতে কীট-পতঙ্গের বংশ লোপ পাইয়া যাইত। ইহা নিবারণের জন্যই কীট-পতঙ্গের দল অসংখ্য ডিম্ব প্রসব করিয়া অসংখ্য নূতন পতঙ্গ উৎপন্ন করে। ইহাতে পাখীরা পেট ভরিয়া খাইতে পায়, অথচ আহারের পর যে-সকল নূতন পতঙ্গ অবশিষ্ট থাকে, তাহারাই বংশ রক্ষা করে।

 তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, পতঙ্গদের বংশ-রক্ষা হউক বা না হউক, তাহাতে পৃথিবীর কিছুই ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। ঐ আপদ্‌গুলা সমূলে মরিয়া গেলেই ভালো। কিন্তু যিনি জগতের সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি এই কথা ভাবেন না,—তিনি অতি ছোটো প্রাণীর বাঁচিয়া থাকার জন্য যেমন ব্যবস্থা করেন, খুব বড় বড় বুদ্ধিমান্ প্রাণীদের জন্যও সেই রকম ব্যবস্থা রাখেন। সিংহ বা ব্যাঘ্র সংসারের কি উপকার করে জানি না। কিন্তু মানুষের ন্যায় সিংহ-ব্যাঘ্ররাও জগদীশ্বরের সৃষ্ট প্রাণী। মানুষের যদি পৃথিবীতে থাকিবার দাবি থাকে, তবে বাঘ, ভালুক, সিংহেরও দাবি আছে। খুঁটি পুঁতিয়া, প্রাচীর উঠাইয়া পৃথিবীর জমি ভাগ করিয়া মানুষ বলে,—এই জমি আমার, এই দেশের রাজা আমি। সিংহের দল যদি জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া বলিতে আরম্ভ করে,—এই জঙ্গল আমাদের, ইহাতে মানুষের কোনো দাবি নাই; তবে তাহাদিগকে অপরাধী করা যায় না। সকল প্রাণীই বিধাতার স্নেহের পাত্র। সিংহ-ব্যাঘ্র, লতাপাতা বা ফলমূল খায় না, দুর্ব্বল পশুদের মাংসই ইহাদের প্রধান খাদ্য। কাজেই সিংহ-ব্যাঘ্রের খাদ্যের আয়োজন এবং তাহাদের বংশরক্ষার উপায় বিধাতাকে করিতে হয়, আবার ইহাও তাঁহাকে দেখিতে হয়, যেন এই সকল বলবান্ প্রাণীর উৎপাতে দুর্ব্বলেরা হঠাৎ প্রাণ হারাইয়া নির্ব্বংশ হইয়া না যায়। এই দুই উদ্দেশ্য সফল করিবার জন্য দুর্ব্বল প্রাণীরা যাহাতে বহু সন্তান প্রসব করে, জগদীশ্বর তাহার বিধান করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু ইহাতে যে সকল দুর্ব্বল প্রাণীরই বংশ রক্ষা হইয়াছে তাহা বলা যায় না। প্রবলের উৎপাত অধিক হওয়ায় এবং আবহাওয়ার সহিত মিলিয়া মিশিয়া থাকিতে না পারায়, অনেক দুর্ব্বল প্রাণী নির্ব্বংশ হইয়া পড়িয়াছে।