পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৯৬

মেঘভরা বাদল দিনের রূপও নেই—নিতান্তই ঘসা-পয়সার মতো চেহারা।

 সিনেমা দেখতে যাব? উট্রাম ঘাটে বেড়াতে যাব? কোথাও বসে খুব গরম চা খাব? লেকের দিকে যাব?—

 ধর্মতলার গির্জার সামনে এক জায়গায় লোকের ভিড় জমেচে। একটা সাহেবী পোশাক পরা লোক ফুটপাথে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে, ধড়টা ও মাথাটা পরস্পরের সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক কোণের সৃষ্টি করেচে যে, মনে হচ্চে লোকটা মারা গিয়েছে। দুজন সার্জেণ্ট এলো। লোকে বললে, সামনের বাড়ির নিচের তলায় ওই বাথ-রুমের মধ্যে পড়েছিল এই অবস্থায়, বাড়ির দারোয়ান ধরাধরি ক’রে তার সংজ্ঞাহীন নিঃসাড় দেহটা একটা ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে কোথায় গেল।

 লোকটার ওপর সহানুভূতি হ’ল আমার। সেই নির্বোধ বধূটার ওপর যা হয়নি, এ বেহুঁশ মাতালের ওপর তা হ’ল। বেচারা আনন্দের খোঁজে বেরিয়েছিল, পথও যা হয় একটা ধরেছিল, হয় তো ভুল পথ, হয় তো সত্যি পথ···আনন্দের সত্যতা তার মাপকাঠি—কে বলবে ওর কি অভিজ্ঞতা, কি তার মূল্য? ওই জানে। কিন্তু ও তো বেহুঁশ।

 কার্জন-পার্কের সামনে এলুম। অনেকগুলো চাকর ও আয়া সাহেবদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বৃষ্টির ভয়ে গাড়িবারান্দার নিচে ফুটপাথের উপরে বসে আছে। বৃষ্টি একটু একটু বাড়ছে, আমিও সেখানে দাঁড়ালুম। একটা ছোট্ট ছেলে, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া সোনালী চুল, নীল চোখ, বছর দেড় কি দুই বয়েস—সে তার চাকরের টুপিটা মাটি থেকে তুলে নিয়ে টলতে টলতে উঠে অতি কষ্টে নাগাল পেয়ে চাকরের মাথায় টুপিটা পরিয়ে