পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১২৮

ও বনের মধ্য দিয়ে সুঁড়ি-পথ। এত সকালে এখনও বনের মধ্যে রৌজ প্রবেশ করে নাই, হেমন্তের শিশিরসিক্ত লতাপাতা, ঝোপঝাপ হইতে একটা আর্দ্র অস্বাস্থ্যকর গন্ধ বাহির হইতেছে।

 পাড়ার সতু বলিল—আর বেশীদূর গিয়ে কি হবে, কি বলো রজনী খুড়ো? এখানেই—

 কেশব বলিল—আর একটু চল বিলের ধারে—

 বিলের ধারে ঘন বাঁশবনের মধ্যে গর্ত করিয়া কাঁথাজড়ানো শিশুকে পুঁতিয়া ফেলা হইল। দশ মাসের দিব্যি ফুটফুটে শিশু, কাঁথা হইতে গোলাপ ফুলের মতো ছোট মুখখানি বাহির হইয়া আছে। মুখখানিতে ছোট্ট একটুখানি হাঁ, মনে হইতেছে যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। কেশবের কোলেই ছেলে, গর্তের মধ্যে পুঁতিবার সময় সে বলিল—গা এখনও গরম রয়েচে।

 রজনী খুড়ো ইহাদের প্রবীণ, তিনি বলিলেন—আহা-হা, ওসব ভেব না। সতু, নাও না ওর কোল থেকে, ওর কোলে কি বলে রেখে দিয়েছ?

 গর্তে মাটি চাপান হইল। কেশব অবাক্ নয়নে গর্তের মধ্যে যতক্ষণ দেখা যায়, চাহিয়া রহিল। ছোট্ট মুঠাবাঁধা হাত দুটি মাটি চাপা পড়িয়া অদৃশ্য হইবার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা শেষ হইয়া গেল।

 রজনী খুড়ো বলিলেন—চল হে বাবাজী, ওদিকে আর চেও না। সংসার তবে আর বলেচে কেন? আমারও একদিন এমন দিন গিয়েচে, আমার সেই মেয়েটা—জান তো সবাই। আজ আবার তোমার মনিব-বাড়ি কাজ, তোমারও তো সেখানে থাকতে হবে। দেখ ত’ দিন বুঝে আজই—