পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২১
বড়বাবুর বাহাদুরি 

দিকে চাহিলে কষ্ট হয়, ওর কাতর অনুরোধ শুনিলে মনে হয়—দূর করো, কাজ নাই সাধুতা দেখাইয়া। ওই অভাগিনীকে জীবনে কখনো সে সুখী করিতে পারে নাই, টাকাটায় একটা ব্যবসা খুলিয়া দিলে অন্নবস্ত্রের কষ্টের একটা মীমাংসা হইবে। এখানে সাধু সাজা স্বার্থপরতা, ঘোর স্বার্থপরতা।

 আশালতার বয়েস কম, জীবনে কোনো সাধ ওর পূর্ণ হয় নাই। ওর মুখের দিকে চাহিয়া না হয় সে নিজের কাছে অসাধুই হইয়া রহিল।

 দিনে এই সব ভাবে, কিন্তু গভীর রাত্রে যখন গ্রাম নিষুতি হইয়া যায়, আশালতা ঘুমাইয়া পড়ে, তখন তার মনে হয় চুরির স্বপক্ষে কি চমৎকার যুক্তিই সে বাহির করিয়াছে। জুয়াচুরি জুয়াচুরিই, তার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি নাই, তর্ক নাই। টাকা তাকে ফিরাইয়া দিতেই হইবে, নিজের কাছে চোর হইয়া সে থাকিতে পারিবে না।

 নিদ্রিত আশালতার মুখের দিকে চাহিয়া সে ভাবিল—ছি ছি, মেয়েমানুষ জাতটা কি ভয়ঙ্কর! ওদের মনে কি এতটুকু সৎ কিছু মানে না? কেবল টাকা-কড়ি, গহনা, চাল-ডালের দিকে নজর?

 দিন যায়। হরিপদ দেখিল, সে স্ত্রীকে মনে মনে অশ্রদ্ধা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহার কত আদরের আশালতা! যাহাকে চোখ ভরিয়া দেখিয়াও চোখের তৃপ্তি হইত না, তাহার সম্বন্ধে এ সব কি ভাবনা তার মনে?

 একদিন হঠাৎ তাহাদের একটা বাছুর মরিয়া গেল।

 এবার হরিপদ ভাবিল—তা যাবে না? সংসারে যখন ওর মতো মেয়ে এসেচে! তখন ওর পরামর্শেই সংসার এবার উচ্ছন্নে যাবে।