পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১১২

দেবব্রত বাবুর বইখানার মতো হচ্ছে। আমার ঐ এক দোষ—যখন যেই বই পড়ি, লিখতে বসলে সেই বইখানার মতো প্লট আর ভাষা হ’য়ে যায়। তা সেদিন দেবব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা হ’ল না, তিনি ওপর থেকে বলে পাঠালেন তিনি বড় ব্যস্ত।

 তাকে উৎসাহ দেবার জন্যে তার একটা গান আবার উল্টে পড়তে লাগলাম। সে হাসি-হাসি মুখে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। ও গানটা সম্বন্ধে আমার প্রশংসার পুনরাবৃত্তি, অত্যন্ত আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে শুনলে—জীবনে বোধ হ’ল এই সর্বপ্রথম নিজের লেখার প্রশংসা শুনচে। কাথাবার্তার মধ্যেও একবার ঘরের চারি ধারে আর একবার আমার মুখের দিকে চেয়ে খুশির সুরে বললে—আমি কোন লেখকের এত কাছে ব’সে কখনো গল্প করিনি। এত বেশীক্ষণ আমার সঙ্গে কেউ কথাও বলেনি।

 আর মিনিট কুড়ি পরে সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাতা-পত্র গুটিয়ে নিয়ে উঠল—ভাবলে বোধ হয় আর বেশীক্ষণ থাকলে আমি পাছে বিরক্ত হই।

 দাঁড়িয়ে উঠতে গিয়ে কি ভেবে আবার বসল, ভয়ে ভয়ে বদলে একটা কথা বলব? কথাটা বলতে সাহস হয় না। অত কম টাকায় কি আপনি রাজী হবেন? আমি আপনাকে দশ টাকা ক’রে মাসে মাসে দিলে, আমাকে লেখা শিখিয়ে দেবেন?

 ওর এই কথাটায় কেমন একটা কষ্ট হ’ল ওর জন্যে। মাত্র ঊনত্রিশ টাকা মাইনে থেকে আমায় দশ টাকা দিতে রাজী—বাকি উনিশ টাকাতেই এখানকার ও বাড়ির খরচ চালাতে —লেখক হবার এতই সাধ।