পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৯০

যেখানে ছিল দাঁড়াইয়া উঠিল। রাধা একটি কুলিকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, ডাক-গাড়ি আসিতেছে। দার্জিলিং মেল।

 অল্পক্ষণ পরেই সশব্দে বিশাল ট্রেণখানা প্লাটফর্মের ও প্রান্তে প্রবেশ করিল। সঙ্গে সঙ্গে ভিড়, হাঁকাহাঁকি, লোক-জনের দৌড়াদৌড়ি, পুরি-তরকারি, পান-বিড়ি-সিগারেট, কুলি কুলি, ইধার আও, হৈ-হৈ ব্যাপার। স্টেশন সরগরম হইয়া উঠিল; রাধা আর নবু যেখানে দাঁড়াইয়াছিল, তারই সামনে ডাক-গাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী কামরাগুলি থামিল।

 রাধা অবাক্ হইয়া চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। ঝকঝক তকতক করিতেছে কামরাগুলি। কি রকম পুরু চামড়ার গদিআঁটা বেঞ্চি। সাহেব, মেম, মোমের পুতুলের মতো তাদের ছেলেমেয়েরা···দামী শাড়ি-পরা সুন্দরী বাঙালী বড়লোকের মেয়েরা··সুবি কোথায় লাগে এদের কাছে? বেহারারা ট্রের উপর চায়ের জিনিস বসাইয়া ছুটাছুটি করিতেছে···একটি অতি সুন্দর ছ’ সাত বছরের ফ্রক্-পরা সাহেবদের মেয়ে প্লাটফর্মে নামিয়া লাফাইতেছিল—তার মা আসিয়া তার হাত ধরিয়া গাড়ির মধ্যে উঠাইয়া লইতে লইতে কি বলিল—হিট্ হিট্, প্রিং প্রিং—কেমন মজার কথা ওদের?···হাসি পায় শুনিলে। সত্যি কি চমৎকার দেখিতে খুকিটা?

 নবু বলিল—এই দিকে এসে দ্যাখো দিদি, খাবার গাড়ি।

 একখানা খুব বড় লম্বা গাড়ির মধ্যে সারি সারি টেবিল পাতা, টেবিলের উপর ধপ্‌ধপে চাদর, কাঁচের ফুলদানিতে ফুল সাজানো, চকচকে সব কাঁচের বাসন! মেলা সাহেব মেম খাইতে বসিয়াছে। বাঙালীর মেয়েও আছে তাদের মধ্যে। তবে বেশি নয় দু’ একজন। আঠারো ঊনিশ বছরের একটি বাঙালীর মেয়ে বেশি