পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অন্নপ্রাশন

 খোকার অবস্থা শেষ রাত থেকে ভালো নয়।

 কি যে অসুখ তা-ই কি ভালো করিয়া ঠিক হইল? জন্তিপুরের সদানন্দ নাপিত এ সব গ্রামে কবিরাজী করে, ভালো কবিরাজ বলিয়া পসারও আছে। সে বলিয়াছিল, সান্নিপাতিক জ্বর। মহেশ ডাক্তারের কম্পাউণ্ডার একটাকা ভিজিটে রোগী দেখে, সে বলিয়াছিল, ম্যালেরিয়া। মহেশ ডাক্তারকে আনিবার মতো সঙ্গতি থাকিলে এতদিন তাহাকে আনা হইত; কাল বৈকালে যে আনা হইয়াছিল সে নিতান্ত প্রাণের দায়ে, খোক। ক্রমশ খারাপের দিকে যাইতেছে দেখিয়া খোকার মা কান্নাকাটি করিতে লাগিল, পাড়ার সকলেও মহেশকে আনিবার পরামর্শ দিল, পরিবারের গায়ের একমাত্র সোনার অলঙ্কার মাকড়ি জোড়াটা বাঁধা দিয়া আটটা টাকা কেশব ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া ও ভিজিটেই ডাক্তারের পাদপদ্মে ঢালিয়াছে। তবুও ত’ ওষুধের দাম বাকি আছে, নিতান্ত কম্পাউণ্ডারবাবু এখানে ডাকডোক পান, সেই খাতিরেই টাকা-দুই আন্দাজ ওষুধের বিলটা এক হপ্তার জন্য বাকি রাখিতে রাজী হইয়াছেন।

 এই তো গেল অবস্থা!

 মহেশ ডাক্তার বলিয়া গিয়াছেন, কোন আশা নাই। অসুখ আসলে নিউমোনিয়া, এতদিন যা তা চিকিৎসা হইয়াছে। রাতটা যদি বা কাটে, কাল দুপুরে ‘ক্রাইসিস’ কাটাইবার সম্ভাবনা কম।

 কেশব এ কথা জানিত, কিন্তু স্ত্রীকে জানায় নাই। শেষ