পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১১
লেখক 

 ছোকরা সলজ্জ হাসিমুখে আমার দিকে চেয়ে বললে—কি যে বলেন। আপনারা আনন্দ পাবেন আমার লেখা থেকে!···আচ্ছা, আপনার মনে হয় সত্যি আমার কিছু হবে?

 —কেন হবে না? না হবার তো কিছু দেখলুম না—খুব হবে।—কান্তি বসু আমারই ক্লাসফ্রেণ্ড, আমারই মতো বয়েস—ও এরই মধ্যে নাম করে ফেলেচে। আচ্ছা, নাম করতে কতদিন যায়? নাম করবার নিয়ম কি?

 আমার দুপুরের বিশ্রামটুকু একেবারেই মাটি হ’ল দেখছি। কি করব উপায় নেই—একে দু’চার কথায় বিদায় দেব ভেবেছিলুম, কিন্তু এর কথা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, আবার কোথা থেকে নাম করবার নিয়ম এনে ফেললে। অথচ কেমন একটা অনুকম্পা হ’ল ওর ওপর, ভালো মনে কথার জবাব না দিয়েও পারলুম না। বললাম—তার কি কোন নিয়ম আছে, তা নেই। দু’চারটে ভালো লেখা বেরুতে বেরুতে ক্রমশ নাম বেরোয়। লোকে আপনার লেখা প’ড়ে যদি খুশি হয়, তবে নাম বেরুতে আর কি দেরি হবে?

 খানিকটা চুপ ক’রে থেকে আমার দিকে চেয়ে আনন্দসুরে বললে—অনেকদিন থেকে আমার ইচ্ছে কোন লেখকের সঙ্গে আলাপ করি। কলকাতায় থাকতে একবার দেবব্রত মুখুয্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন দেবব্রত বাবুর ‘অপরিণত’ বইটা সবে বেরিয়েচে—সারা রাত ধরে জেগে বইখানা পড়লাম, এমন ভালো লাগল আর এমন একটা ইন্‌স্পিরেশন্ পেলাম—তার পরদিন আমিও একখানা ওই রকম নভেল লিখব ভাবলাম। আট-দশ চ্যাপ্টার লিখেও ফেললাম। কান্তিকে দেখাতে গেলাম, সে বললে এর প্লট, ভাব, ভাষা, সব নাকি