পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৮০

 সুবি পদগুলি আবৃত্তি করিয়া গানটি বলিয়া গেল।

 নাপিত-বৌ গানের ভাষা বিন্দুবিসর্গও বুঝিল না। সুবির মন যোগাইবার জন্য একমনে শুনিবার ভান করিয়া মাঝে মাঝে ঘাড় নাড়িতে লাগিল।

 সুবি ভাবিতেছিল, এ বর্বরদের গান শুনাইয়া লাভ কি? আজকাল তাহার গলা সত্যিই ভালো হইয়াছে। নিধুদা যদি শুনিত!·····

 আর কলিকাতায় যাওয়া হইবে না·····নিধুদা’র সঙ্গে দেখাও আর হইবে না। তাহার বিবাহের সম্বন্ধ খোঁজা চলিতেছে, স্কুল ছাড়াইয়া আনিয়া বাড়িতে রাখা হইয়াছে। বয়েস ষোল ছাড়াইতে চলিল কি না! আর বাড়ির বাহির হইবার হুকুম নাই। কলিকাতা ··চিত্রা···রূপবাণী···কেতকী···শোভা, নিধুদা’··· সব স্বপ্ন···এ জন্মের মতন সব ফুরাইয়াছে···সোনার স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। আশ্চর্য নয় যে, তেইশ বছরের বিধবা রাধার ঘনিষ্ঠতা তাহার ভালো লাগে না। নাপিত-বৌ তাহার পায়ের তলায় পোষা কুকুরের মতো পড়িয়া থাকে, কোনো রকমে সহ্য করিয়া থাকিতে হয়। ঝি-চাকরকেও তো লোকে সহ্য করে।

 রাধা বলিল—ভাই সুবি, তোর গলাখানা যদি একবার পেতাম। হিংসে হয়, সত্যি।

 সুবি নাপিত-বৌয়ের খোসামোদ ও রাধার গায়ে পড়িয়া আলাপ জমানোর চেষ্টা ঠেলিয়া ফেলিয়া চায়ের পাত্র লইয়া চলিয়া গেল। সে মরিতেছে নিজের জ্বালায়, এমন সময়ে এ-সর ন্যাকা ন্যাকা কথা তাহার ভালো লাগে না।

 জেলেপাড়ার ঘাটে ছিপছিপে, ফরসা, থান-পরা জেলে-বৌ কাপড় কাচিতে নামিল।