পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অকারণ

 মনটা ভালো ছিল না। এক একদিন এ রকম হয়।

 কিছু পড়তে ভালো লাগে না, কিছু ভাবতে ভালো লাগে না, কারুর সঙ্গে কথা বলতেও ভালো লাগে না। মনে হয়, যেন মনের চাকার তেল ফুরিয়ে গিয়েচে—‘অয়েল’ না ক’রে নিলে চাকা আর চলবে না, ক্রমে মরচে পড়ে আস্‌বে। তারপর কবে একদিন ফুট্ করে বন্ধ হয়ে যাবে।

 জেলেপাড়া লেনে এক পুরোনো তাসের আড্ডায় গেলুম। সেই সব পুরোনো বন্ধুরা এসে জুটেচে—তাস কিন্তু ভালো লাগল না। তাস খেলে জিতব, অন্যদিন এতে কত উৎসাহ, আনন্দ পাই। আজ মনে হ’ল, না হয় জিতলামই, তাতেই বা কি?—এদের গল্প-গুজব ভালো লাগল না। অর্থহীন—অর্থহীন—এই নিচু বৈঠকখানা ঘর, চূণ বালিখসা দেওয়াল, সেই সব একঘেয়ে সস্তা ওলিওগ্রাফ্ ছবি—কালীয়দমন, অন্নপূর্ণার ভিক্ষাদান, কি একটা মাথামুণ্ডু ল্যাণ্ড্‌স্কেপ—একঘেয়ে কথাবার্তা, চিরকাল যা শুনে আসচি—হঠাৎ মন বিরস ও বিরূপ হয়ে উঠল—সব বাজে, সব অর্থহীন,—পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলুম—আপনার বেশ ভালো লাগছে? মনে কোনো রকম—

 সে অবাক্ হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল। বললে—কেন, ভালো লাগচে না কেন? কেন বলুন তো!—

 মন আরও তিক্ত হয়ে উঠল। কাজের ছুতোয় সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লুম। বেলা চারটে বাজে। ফিরিওয়ালারা গলির