পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৯
বড়বাবুর বাহাদুরি 

 সিরাজগঞ্জে গিয়া টাকা ভাঙ্গাইয়া আনিতে কোনো বাধা হইল না। কথা ফাঁস করিতে নাই, চতুর হরিপদ মামাকে বলিল, ব্রহ্মোত্তর ধানের জমিগুলো সব বেচে দিলুম। কি করি, একটা ব্যবসা খুলব, টাকা যোগাড় করি কোথা? সত্যনারায়ণের শিন্নি দেওয়াও ভুলিয়া গেল।

 মাস খানেক কাটিয়া গিয়াছে। অন্য কোনো দিক হইতেই হাঙ্গামা বাধে নাই বটে, কিন্তু হরিপদ বড় বিপদে পড়িয়াছে, এই এক মাস তাহার মনের দিক হইতে একটা বড় গোলমাল বাধিয়া গিয়াছে। এই টাকাটা লইয়া সে কি ভালো করিল!

 আপিসের তাহারা এতদিন তাহাদের ভুল নিশ্চয়ই জানিয়া ফেলিয়াছে। তাহার খোঁজও করিয়াছে। কিন্তু কোথায় পাইবে তাহার পাত্তা। সেই কেরানী বাবুর উপরে নিশ্চয়ই সব দায়িত্ব পড়িয়াছে এবং এতদিন বেচারীর চাকরি আছে কিনা সন্দেহ।

 যতই দিন যাইতে লাগিল, হরিপদ ততই মনে অস্বস্তিবোধ করিতে লাগিল। যতদিন পুলিশের ভয় ছিল, বা আপিস হইতে তাহার টাকা কাড়িয়া লইবার ভয় ছিল, ততদিন তাহার মনে এ কথা ওঠে নাই যে, এ টাকা লওয়া অন্যায় বা পাপ। কিন্তু এ সম্বন্ধে যতই সে নিজেকে নিরঙ্কুশ বোধ করিতে লাগিল, ততই মনে হইতেছিল এ টাকায় তাহার কোনো অধিকার নাই, এ অপরের টাকা সে চুরি করিয়া আনিয়াছে।

 ছ’মাস কাটিয়া গেল; কখনো সে ভাবে, টাকাটা ফিরাইরা দিব; আবার পরদিনই মনে হয় এই এগারোশো টাকার একখানি মুদীর দোকান খুলিয়া গ্রামে বসিয়াই সে চমৎকার চালাইতে পারে। ভগবান তাহাদের দুঃখ দেখিয়া মূলধন যোগাড় করিয়া দিয়াছেন। থাক্, টাকাটা।