পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
center
১৩২

থাক, একটা ভ্রষ্টা স্ত্রীলোককে নিয়ে আমি বা আমার বাড়ির কেউ খাবে না—আমার টাকা নেই বটে, কিন্তু তেমন বাপের—ইত্যাদি।

 তিন-চারজন ছুটিল কুমার চক্রবর্তীকে বুঝাইয়া ঠাণ্ডা করিয়া ফিরাইয়া আনিতে। কুমার চক্রবর্তী যে একরোখা, চড়ামেজাজের মানুষ সবাই তাহা জানে। কিন্তু, ইহাও জানে যে, সে রাগ তার বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না। নায়েব মশায় বলিলেন—তুমি যেও না হরি খুড়ো—তোমার মুখ ভালো না, আরও চটিয়ে দেবে। কার্তিক যাক, আর শ্যামলাল যাক—

 হারাণ চক্রবর্তীর যে মেয়েটিকে লইয়া ঘোঁট চলিতেছে, সে মেয়েটি কাজের বাড়িতে পদার্পণ করে নাই।

 পাশের বাড়ির গোলার নিচে সে এতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়াছিল, আজই একটা মিটিং হইয়া তাহার সম্বন্ধে যে চূড়ান্ত সামাজিক নিষ্পত্তি কিছু হইবে, তাহা সে জানিত এবং তাহারই ফল কি হয় জানিবার জন্যই সে অপেক্ষা করিতেছিল।

 হঠাৎ চেঁচামিচি শুনিয়া সে ভয় পাইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল এবং তাহারই নাম কুমার চক্রবর্তীর মুখে ওভাবে উচ্চারিত হইতে শুনিয়া পাঁচিলের ঘুলঘুলি দিয়া দুরু দুরু বক্ষে ব্যাপারটা কি দেখিবার চেষ্টা পাইল।

 পাঁচিলের ওপাশে নিকটেই কেশবকে দেখিতে পাইয়া সে ডাকিল—কাকা, ও কাকা—

 কেশব কাকাকে সে ছেলেবেলা হইতে জানে, কেশব কাকার মতো নিপট ভালোমানুষ এ গাঁয়ে দুটি নাই ৷

 আহা, সে শুনিয়াছে যে, আজই সকালে কেশব কাকার খোকাটি মারা গিয়াছে, অথচ নিজের দুর্ভাবনায় আজ সকাল