পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৯০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


অনুনয়বিনয়ে সে স্থান পরিত্যাগপূর্বক ভগবান্‌গোলা পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ভগবান্‌গোলার সুন্দর অবস্থান দেখিষা রহিম খা ঁউক্ত স্থানে সৈন্য সমাবেশ করিয়া নবাবসৈন্যের বাধা দিবার জন্য অবস্থিতি করিতেছিল। কিন্তু অবশেষে রাজমহলে নবাব ইব্রাহিব খাঁর পুত্র জবরদস্ত খাঁ-কর্তৃক পরাজিত হয়।[১]

 খ্রীস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী পদে প্রতিষ্ঠিত হইলে, ভগবান্‌গোলার গৌরব উচ্চসীমা অধিকার করিয়াছিল। পদ্মা, ভাগীরথী, জলঙ্গী প্রভৃতি প্রধান প্রধান নদীবক্ষ দিয়া সমস্ত বঙ্গদেশের পণ্যদ্রব্য আসিয়া ভগবান্‌গোলার বাজার পরিপূর্ণ করিয়া তুলিত। নিকটে কাশীমবাজার প্রভৃতি স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় জাতির কুঠী সংস্থাপিত থাকায়, এখানকার ক্রয়-বিক্রয় বহুলপরিমাণেই সম্পন্ন হইত। তদ্ভিন্ন ভগবান্‌গোলা বাঙ্গলার একরূপ সীমান্ত প্রদেশে অবস্থিত থাকায়, বিহার প্রদেশের সহিত ইহার বাণিজ্যকার্যের অত্যন্ত সুবিধা হইয়াছিল। পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায়, রাজমহল প্রভৃতি স্থানের সহিতও ইহার বিশেষ সম্বন্ধ ছিল। নবাব আলিবর্দী খাঁর সময়ে ইহার শ্রীবৃদ্ধি সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হয়। তাহারই রাজত্বকালে বঙ্গভূমি বারংবার মহারাষ্ট্রীয়গণ কর্তৃক আক্রান্ত হয়; এজন্য ভগবান্‌গোলাকে বিশেষরূপে সুরক্ষিত করা হইয়াছিল। নদীতীর ব্যতীত অন্য সকলদিক পরিখা ও কাঠের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত করা হয়। মহারাষ্ট্রীয়গণের আক্রমণের বিশেষ রূপ আশঙ্কা হইলে, সময়ে সময়ে সহস্র অশ্বারোহী ও সহস্র পদাতিক ইহার রক্ষাকার্যে নিযুক্ত থাকিত এবং সুবার বিশ্বস্ত, নিপুণ ও কার্যক্ষম কর্মচারিগণই ইহার রক্ষার গ্রহণ করিতেন।

 ১৭৪৩ খ্রীঃ অব্দে ভাস্কর পণ্ডিত ও আলিভাই-এর অধীন মহারাষ্ট্রীয়গণ চারিবার ভগবান্‌গোলা আক্রমণ করে; কিন্তু প্রত্যেক আক্রমণই প্রতিহত হওয়ায়, তাঁহারা কিছুই করিয়া উঠিতে পারে নাই। ১৭৫০ খ্রীঃ অব্দের প্রথম ভাগে পুনর্বার মহারাষ্ট্রীয়গণ ভগবান্‌গোলা আক্রমণ করে। এই বার তাঁহারা নগরমধ্যে প্রবেশ করিতে সমর্থ হয়। এবং বহুসংখ্যক দ্রব্য ও অর্থ লুণ্ঠন করিয়া গৃহসকল ভস্মীভূত করিয়া চলিয়া যায়। এই আক্রমণে নবাব আলিবর্দী খাঁকে বিশেষরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইয়াছিল। ভগবান্‌গোলায় সর্বদা নবাবের নৌসেনা অবস্থিতি করিত। জলপথে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করিতে হইলে, ভগবান্‌গোলার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইতে হয়। এই কারণে বহিঃশত্রুকে বাধাপ্রদানের জন্য এবং ভগবানগোলা-বন্দরের সুরক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদের যাবতীয় নৌসেনা সর্বদা ভগবান্‌গোলায় সুসজ্জিত থাকিত। সুতরাং বাঙ্গলার তৎকালীন সর্বপ্রধান নৌসেনাস্থান ঢাকা বা জাহাঙ্গীর নগরের সহিত ইহার বিশেষরুপ সম্বন্ধ ছিল। নৌসেনার অবস্থানের জন্য মহারাষ্ট্রীয়গণ অনেকবার ভগবানগোল৷ আক্রমণ করিবার উদ্যোগ করিয়াও কৃতকার্য হইতে পারে নাই।

  1. Stewart's History of Bengal (New Edition), p. 211.