পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৯৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


নির্মিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা প্রীতিভোজনের স্থানরূপে নিদিষ্ট হইয়া থাকে, তাহাদের চিত্রে আমাদের উপবেশনশালা সুসজ্জিত হয় এবং তাহাদিগকে অবলম্বন করিয়া কত কত উপকথার সৃষ্টি হইয়াছে।[১] রাজপুতানার প্রাচীন দুর্গ, দিল্লী ও আগরার প্রাচীন প্রাসাদ, গৌড়ের ভগ্নস্তুপ আমাদিগের সৌন্দর্যানুরাগের বৃদ্ধি সাধন করে মাত্র। সেইরূপ মুর্শিদাবাদের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ প্রাচীন স্থানগুলি ও তাহাদের ভগ্নাবশেষ নয়নের তৃপ্তিসাধন ও তদাশ্রিত উপকথাগুলি বালক-বালিকাগণের মনস্তুষ্টি ব্যতীত আর কোন ব্যবহারে আইসে না।[২] শান্তিপ্রিয় নওয়াজেস মহম্মদ খা ঁঅনেক উদ্দেশ্য-সাধনার্থ অশ্বপদাকৃতি মোতিঝিলের তীরে স্বীয় প্রাসাদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। আমরা এক্ষণে তাহার ভগ্নাবশেষসহ মোতিঝিলের সুন্দর দৃশ্য দেখিয়া তৃপ্ত হইয়া থাকি।

 বাস্তবিকই মোতিঝিল মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি রমণীয় দৃশ্য। যখন কেহ ইহার নিকটে উপস্থিত হন, তখনই হৃদয় স্বর্গীয় ভাবে ভরিয়া যায়। অশ্বপদাকৃতি ঝিল সলিলভরে টলটল করিতেছে,—স্থানে স্থানে পদ্মবনে বিকশিত পদ্মগুলি সলিল হইতে মস্তক উত্তোলনপূর্বক মৃদু বায়ুবেগে ঈষৎ সঞ্চালিত হইতেছে,—নানাবিধ জলচর পক্ষী কখন ঝিলে বসিয়া কলরব করিতেছে, কখন বা তান ছাড়িতে ছাড়িতে সুদূর অম্বরপথে মিশিয়া যাইতেছে; কোকিল পাপিয়া প্রভৃতিরও মনোমোহকর সঙ্গীতে দিঘালাগণ চমকিত হইয়া উঠিতেছেন! ঝিলবেষ্টিত ভূভাগ হরিদ্বর্ণ তৃণে আচ্ছাদিত হইয়া শ্যামলতার ঢেউ খেলাইতেছে। মহাকবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ তৃণরাশিতে যে-মহিমাময়ী উজ্জ্বলতা[৩] দেখিতেন, সেই মহীয়সী উজ্জ্বলতা এই শ্যামল তৃণসাগরে প্রতিনিয়ত ক্রীড়া করিয়া বেড়াইতেছে। যখন সমীরন্দোলিত স্বচ্ছ সলিলরাশি সৌর-করে বা চন্দ্রকিরণে সহস্র সহস্র মণিমাণিক্য ফুটাইতে থাকে, সেই সময়ে তরঙ্গায়িত হরিদ্বর্ণ তৃণসমুদ্রে দৃষ্টিপাত করিলে বোধ হয়, যেন সহসা অল্পোেরাজ্য পৃথ্বীতলে অবতীর্ণ হইয়াছে। ঝিলের পূর্বতীরে দীর্ঘকায় বৃক্ষসকল সলিল-দর্পণে আপনাদিগের প্রতিবিম্ব নিরীক্ষণ করিতেছে, তাহাদের ছায়ায় বসিয়া গোপবালকগণ কখন গ্রাম্য-সঙ্গীত গাহিতেছে, কখন বা ভবশিষ্ট প্রাসাদের দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করিয়া পরম্পরে নানাপ্রকার উপকথা বলিতেছে।[৪]

  1. Spencer’s Essays-Use and Beauty.
  2. বাবু ভোলানাথ চন্দ্র মুর্শিদাবাদের ধ্বংসোপলক্ষে লিখিয়াছেনঃ-"They gave birth of tales of vampires and goblins that yet amuse children in native nurseries.” (Travels of a Hindoo, Vol. I, p. 72).
  3. Splendour in the grass.
  4. নওয়াজে মহম্মদ খার প্রাসাদকে সাধারণ লোকে “সিংদালান” বলিয়া থাকে। রাখালবালকগণ তাহাকে দেখাইয়া এইরূপ বলে যে, ইহাতে সাত পাত্র ধন প্রোথিত আছে। যে একরাত্রে সিংদালান সাত বার ভাঙ্গিতে ও গড়িতে পারিবে, সে-ই উক্ত ধনরাশির অধিকারী