পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

the original core of the genre’. (১৯৮৭: ১৩২)। এই বক্তব্য অন্তত দার্শনিকতা ও তাৎপর্যের অনেকান্তিকতার ওপর উদ্ভাসনী আলো নিক্ষেপ করে। বহুস্বরিক উপন্যাসের ‘কার্নিভাল’ শিকড় সম্পর্কিত তাঁর আলোচনায় প্রকাশ-মাধ্যমের ঐ মৌল কেন্দ্রের ভিত্তি সম্পর্কিত ধারণা বিশদ করা হয়েছে। বাখতিন প্রাগুক্ত মন্তব্যে আরও জানিয়েছেন, ‘This distinguishes the Socratic dialogue from the purely rhetorical dialogue as well as from tragic dialogue.... The Socratic discovery of the dialogic nature of thought, of truth itself, presumes a carnivalistic familiarization of attitudes toward the object of thought itself, however lofty and important, and toward truth itself.’ (তদেব)। এই যে বলা হলো চিন্তার উদ্দিষ্টের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কার্নিভালসুলভ পরিচিতীকরণ—তাতে আসলে আরোপিত আভিজাত্যের প্রত্যাখ্যান ও প্রতিষেধ বোঝানো হলো। শেষ পর্যন্ত মূল প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে, সত্য কী এবং সত্যে পৌঁছানোর পথ-ই বা কী!

 সত্য-সম্পর্কিত মানুষের চিন্তা এবং সত্য সন্ধানের পদ্ধতি স্বভাবে দ্বিবাচনিক—এই কেন্দ্রীয় উপলব্ধির সূচনা করেছিলেন সক্রেটিস, বাখতিন তা লক্ষ করেছেন। সক্রেটিসের ভাবনাবিশ্ব নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে সত্য সন্ধানের প্রকরণ সরকারি একবাচনিকতার প্রতিস্পর্ধী। নির্দিষ্ট কোনো সত্যের উপর নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির দখলদারি অগ্রাহ্য করে সক্রেটিস জানিয়েছিলেন, কোনো ব্যক্তি-মানুষের মস্তিষ্কে সত্য জন্ম নেয় না কিংবা তাকে সেখানে খুঁজেও পাওয়া যায় না। তাঁর মতে ‘it is born between people collectively searching for truth, in the process of their dialogic interaction.’ (তদেব: ১১০)। সত্যের সামূহিক সন্ধান যেহেতু মূর্ত সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে সম্ভব, লোকায়ত জীবনের অনভিজাত স্বতঃস্ফূর্ততায় উদ্ভূত হতে পারে অনেকার্থ-দ্যোতনার প্রক্রিয়া। জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভট উপাদান থাকতে পারে, তা আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ করেছি। ঐসব উপাদানের অতিব্যক্ত শারীরিক অনুষঙ্গ ও আতিশয্য থাকা সত্ত্বেও এদের অপরিহার্য বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই জগতের পদে পদে দ্বৈততা ও দ্বিচারিতা রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে আত্মবিদারক শ্লেষ ও বলিষ্ঠ পরিহাস। সর্বব্যাপ্ত উন্মুক্ততায় সবই মানিয়ে যায় কেননা এদের সবচেয়ে বড়ো শক্তি প্রচ্ছন্ন রয়েছে অকৃত্রিমতায় ও সাবলীলতায়। বস্তুত কার্নিভালের প্রধানতম শক্তি এখানেই যে, তা হলো ‘a site in which multiple cultural forms combine’ (ডেন্‌টিথ: ১৯৯৫: ৭০)। এই স্থিতিস্থাপকতা একবাচনিক সরকারি প্রতিবেদনে অকল্পনীয়।

 বাখতিন যে কার্নিভালের হাসিকে পুনর্জীবন দানে সক্ষম ইতিবাচক শক্তি হিসেবে ভেবেছিলেন, তার যাথার্থ্য আমাদের পাঠঅভিজ্ঞতা দিয়ে সমর্থন করা সম্ভব। বাখতিনের রাবেলে পাঠ আমাদের প্রচুর ব্যঞ্জনা-গর্ভ চিন্তাসূত্র উপহার দিয়েছে। আপাতত নতুন দৃষ্টান্ত আহরণ না-করে আমরা লক্ষ করতে পারি, কোনো পাঠকৃতির অন্তর্বয়নে নিহিত অন্যোন্য-সম্পর্কগুলি বৌদ্ধিক আভিজাত্য দিয়ে পুরোপুরি নির্মিত হয় না। প্রতিটি পাঠকৃতিকে ঘিরে রাখে যে দৃশ্য ও অদৃশ্য সাংস্কৃতিক বলয়, তার লোকায়ত উৎস খুঁজে নিতে পারলে বুঝব, কার্নিভালের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিচ্ছুরণ পাঠকৃতির কতটা গভীরে সঞ্চারিত হতে পারে। এই বিচ্ছুরণ আসলে বয়ানের ‘historical density’-এর প্রমাণ।

৯৫