পাতা:রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
রূপসী বোম্বেটে

 শুভ্র ফ্ল্যানেলের পরিচ্ছদে সজ্জিত একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক যুবতীর অদূরস্থিত আর একখানি চেয়ারে আসিয়া বসিলে যুবতী তাহার সহিত কথোপকথন আরম্ভ করিলেন।

 দুই চারিটি,কথার পর যুবতী সেই প্রৌঢ় ভদ্র লোকটিকে বলিলেন, “হাঁ মামা, এখন আমার সমাজে মিশিবার সময় হইয়াছে। আমার মা যখন তাঁহার বিশ্বাসঘাতক কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রে সর্ব্বস্বান্ত হইয়া ভগ্ন-হৃদয়ে প্রাণত্যাগ করেন—সেই সময় আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, আমি তাহাদের সকলেরই সর্ব্বনাশ করিব। সে আজ ছয় বৎসরের কথা; এই ছয় বৎসরের এক দিনও আমি সেই প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হই নাই। রাজদ্বারে অভিযোগ করিয়া আইনের সাহায্যে এই প্রবঞ্চনার প্রতিকার হইবে না জানিয়া আমি স্বহস্তে তাহাদের প্রতিফল দানের জন্য প্রস্তুত হইতেছিলাম। তাহার পর বোম্বেটে-গিরি আরম্ভ করিয়া এই দীর্ঘকালে আমি প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করিয়াছি। আমার প্রচণ্ড প্রতাপে আটলাণ্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে সকল দেশের জাহাজ কম্পমান! সমুদ্রপথে আমার অব্যাহত গতি, সুবিস্তীর্ণ সমুদ্রে আমি যাহা ইচ্ছা করিয়া আসিয়াছি; কিন্তু যাহাদের সর্বনাশের জন্য এই জঘন্য বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছি, সমুদ্রে বাস করিয়া তাহাদিগকে শাস্তি দান করা অসম্ভব; সুতরাং আমাকে স্বলে অবতরণ করিতে হইবে।”

 পাঠক বুঝিয়াছেন এই যুবতী আমাদের পূর্ব্ব পরিচিত আমেলিয়া কার্টার; তিনি যাহার সহিত আলাপ করিতেছিলেন তাহার নাম জ্যাক গ্রেভিস্। জ্যাক সম্বন্ধে আমেলিয়ার মাতুল। জ্যাক পূর্ব্বে চুরী বাটপাড়ী করিয়া জীবিকানির্বাহ করিত, শেষে সে তাহার ভাগিনেয়ীর দলভূক্ত হয়। এখন জ্যাক আমেলিয়ার দক্ষিণ হস্ত, সে-ই এই।