পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৫৫

 আমার এই কলঙ্কে যাঁহারা আমাকে ঘৃণা করিবেন, আমি তাঁহাদের কাছে বিদায় চাহিতেছি—

“দেখিলে কলঙ্কীর মুখ কলঙ্ক হইবে,
এজনার মুখ আর দেখিতে না হবে।
ফিরে ঘরে যাও নিজ ধরম লইয়া,
দেশে দেশে ফিরিব আমি যোগিনী হইয়া
কালো মাণিকের মালা তুলে দিব গলে,
কানুগুণ-যশ কাণে পরিব কুণ্ডলে।
কানু-অনুরাগ-রাঙ্গা বসন পরিব,
কানুর কলঙ্ক ছাই অঙ্গেতে মাখিব।”

 এখানে গেরুয়া পরা, ভষ্ম মাখা, যোগিনী হওয়া—এ সমন্তই আধ্যাত্মিক সম্পদের আভাষ। চণ্ডীদাস যে রেখাপাত করিলেন, কিছু দিন পরেই তাহা এক সুবর্ণচ্ছবি গৌরকান্তি পুরুষ-রূপে দেখা দিল কৃষ্ণ নামই তাঁহার কর্ণের কুণ্ডল, কৃষ্ণ-অনুরাগেই তাঁহার রাঙ্গা বাস এবং কৃষ্ণ-কলঙ্কই সেই তরুণ সন্ন্যাসীর অঙ্গের ভষ্ম হইয়াছিল।

 এই কৃষ্ণের কলঙ্কের কথা তিনি সখীদের কাছে এবং আত্মনিবেদনের অনেক স্থলে উল্লেখ করিয়াছেন—

“কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে, তাহাতে নাহিক দুঃখ
বঁধু তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে সুখ।”

 বস্তুতঃ যদিও কৃষ্ণের কালোবর্ণের কথা অনেক পুরাণে উল্লিখিত আছে কিন্তু বাঙ্গলায় এই বর্ণটি বিশেষ ভাবে ভগবানের স্মারক হইয়া পড়িয়াছিল। চৈতন্যের পূর্ব্বে মাধবেন্দ্র পুরী কালোমেঘ দেখিলে মূর্চ্ছিত হইতেন। কৃষ্ণপ্রস্তরনিষ্মিত শত শত বাসুদেব মূর্ত্তি অত্যাচারীর কুঠারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়াছিল, প্রাণপণ করিয়াও এই সকল বিগ্রহ পূজারীরা রক্ষা করিতে পারেন নাই। বাঙ্গলার এক পুকুরে দেখা গিয়াছিল—একAC