পাতা:রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
রূপসী বোম্বেটে

 স্মিথ আবার চক্ষু মেলিয়া সম্মুখে চাহিল; দেখিল ‘ওরিনকো’ জাহাজের আলোক ক্রমে দিক্-চক্রবাল রেখায় মিলাইয়া যাইতেছে। মুহূর্ত্তের জন্য সে তাহা দেখিতে পাইল; কিন্তু বৃষ্টির ধারা-প্রাচুর্য্যে তাহার দৃষ্টি অবরুদ্ধ হইল। পুনর্ব্বার চক্ষু মেলিয়া আর সে জাহাজের আলোক দেখিতে পাইল না; দেখিল, অন্ধকার—জগদ্ব্যাপ: অনন্ত অন্ধকার তাহাকে গ্রাস করিতে উদ্যত! ভয়ে সে পুনর্ব্বার চক্ষু মুদিল;—হৃদয়েও নিরাশার বিরাট গাঢ় অন্ধকার; স্তিমিত জীবনদীপ নির্ব্বাপিত-প্রায়!

 স্মিথ সেই বেল্টের উপর ভাসিতে ভাসিতে ক্ষীণ স্বরে বলিল, “এবার বুঝি প্রাণ বাঁচে না! এমন বিপদে ত কখন পড়ি নাই। শয়তান যে ধর্ম্মাত্মা পাদরীর পোষাক পরিয়া আমার স্কন্ধে ভর করিবে, আমাকে সমুদ্রে ডুবাইয়া মারিবে, ইহা কে মনে করিয়াছিল? প্রভু আমাকে খুব সাবধানে থাকিতে বলিয়াছিলেন। নিজের দোষেই এই বিপদে পড়িলাম! কোন দিকে ত কোনও জাহাজ দেখিতেছি; কতক্ষণ এ ভাবে ভাসিব?—আমার আর উদ্ধারের আশা নাই। কিন্তু এ বয়সে কাহার মরিতে ইচ্ছা হয়? অদৃষ্টে কি এই ছিল? শেষে সমুদ্রে পড়িয়া প্রাণ হারাইতে হইল!”

 স্মিথ সমুদ্র-তরঙ্গে উৎক্ষিপ্ত হইয়া অকুলে ভাসিয়া চলিল। কোন্ দিকে সে যাইতেছে, তাহা সে জানে না; কতক্ষণ সে জলে ভাসিল, তাহাও সে বুঝিতে পারিল না। ক্রমে শীতে তাহার হাত পা আড়ষ্ট হইয়া গেল, দাতে দাঁতে বধিতে লাগিল। বৃষ্টি ধরিলে সে কিছু দূরে একটি উজ্জ্বল আলোক দেখিতে পাইল। তাহার বোধ হইল, উহা কোনও জাহাজের আলোক।—জাহাজখানি কত দূরে আছে, তাহা সে বুঝিতে পারিল না; কিন্তু আলোক দেখিয়া।