পাতা:রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
রূপসী বোম্বেটে

পাণ্ডুর মুখে ও মুদিত নেত্রে প্রভাতারুণের হিরন্ময় কিরণ প্রতিবিম্বিত হইতে লাগিল।

   *   *   *   *   

 ‘আনাবেল’ নামক সুবৃহৎ “সদাগরী জাহাজের কাপ্তেন মাষ্টার্শ প্রাচীন ও বহুদর্শী কাপ্তেন। পূর্ব্বে তিনি প্যাসেঞ্জার ষ্টীমারে কাপ্তেনী করিতেন; কিন্তু তাঁহার পরিচালিত একখানি প্যাসেঞ্জার জাহাজ সমুদ্রে ডুবিয়া যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাহাকেই দোষী করেন। জাহাজের আরোহী ও নাবিকগণ সকলেই রক্ষা পাইয়াছিল বটে, কিন্তু জাহাজডুবি হওয়ায় কোম্পানীর অত্যন্ত ক্ষতি হইয়াছিল। কাপ্তেন মাষ্টার্শের কোনও দোষ না থাকিলেও, কর্তৃপক্ষের বিচারে তিনি পদচ্যুত হইলেন। তিনি নানা প্রমাণ প্রয়োগে নিজের নির্দ্দোষিতা প্রতিপন্ন করিলে, এক বৎসর পরে তাঁহাকে এই সদাগরী জাহাজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করা হয়। সেই সময় হইতে তিনি ‘আনাবেলে’র কাপ্তেনী করিতেছেন।

 স্মিথ যে সময় সংজ্ঞাহীন ভাবে সমুদ্রে ভাসিয়া যাইতেছিল, সেই সময় ‘আনাবেল্‌’ মাল লইয়া আমেরিকার দিকে অগ্রসর হইয়াছিল; অতি প্রত্যুফে কাপ্তেন ডেকের উপর বেড়াইতে বেড়াইতে দেখিলেন, কিয়দ্দূরে সমুদ্র-তরঙ্গে কি একটা ভাসিয়া যাইতেছে!-তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেই দিকে চাহিলেন, মানুষ নহে ত? -ঠিক বুঝিতে না পারিয়া তিনি দূরবীক্ষণের সাহায্য গ্রহণ করিলেন। দূরবীণ দিয়া দেখিলেন, একটি মানুষ সমুদ্রে ভাসিয়া যাইতেছে!—নিকটে বা দূরে কোনও জাহাজের চিহ্ন নাই, এখানে মানুষ কোথা হইতে আসিল? পূর্ব্ব-রাত্রে ঝড় বৃষ্টির সময় কোনও জাহাজ ডুবিয়াছে কি না তাহাও বুঝিতে পারিলেন না। কিন্তু ভাসমান মনুষ্যটি জীবিত কি মৃত।