ছড়া/সিউড়িতে হরেরাম মৈত্তির

উইকিসংকলন থেকে

১০

সিউড়িতে হরেরাম মৈত্তির
পাঁজি দেখে সতেরােই চৈত্তির।
বলে আজ যেতে হবে মথুরায়,
সেথা তার মামা আছে সতু রায়।
বেস্পতিবারে গাড়ি চ’ড়ে তার
চাকা ভাঙে নরসিংগড়ে তার।
তাই তার যাত্রাটা ঘুরুলে,
ফিরে এসে চলে গেল সুরুলে।
ঠিক হল যেতে হবে পেশােয়র,
সেথা আছে সেজো মাসি মেসো আর।
এসে দেখে একা আছে বউ সে,
মেসো গেছে পানিপথে পৌষে।
হাথুয়ার কাছাকাছি না যেতেই
বাঙালি সে, ধরা পড়ে সাজেতেই।
চোখ রাঙা ক’রে বলে দারােগা,
থানামে লে কর্‌ হম্‌ মারাে গা।
ছােটো ভাই বেঁধে চিঁড়ে মুড়কি
সন্ন্যাসী হয়ে গেল রুড়কি।

ঠোকর খেয়ে পড়ে বোঁচকায়,
কুক্ষণে পা দুখানা মােচকায়,
শেষে গেল সুলতানপুরে সে,
গান ধরে মুলতান-সুরে সে।
বেলাশেষে এল যবে বামড়ায়
কী ভীষণ মশা তাকে কামড়ায়।
বুঝলে সে শান্ত যে হওয়া দায়,
গােরুর গাড়িতে চলে নওয়াদায়।
গােরুটা পড়ল মুখ থুবড়ি
ক্রোশ দুই থাকতেই ধুবড়ি।
কাটিহারে তুলে তাকে ধরল,
তখন সে পেট ফুলে মরল।
শুনেছে তিসির খুব নামাে দর,
তাই পাড়ি দিতে গেল দামােদর।
দামােদরে বুধুরাম খেয়া দেয়,
চেপে বসে ডেপুটির পেয়াদায়।
শংকর ভােরবেলা চুঁচড়ােয়
হাউ হাউ শব্দে গা মুচড়ােয়।
নাড়াজোলে বড়ােবাবু তখুনি
শুরু করে বংশুকে বকুনি।
বংশুর যত হােক খাটো আয়,
তবু তার বিয়ে হবে কাটোয়ায়।

বাঁধা হুঁকো বাঁধা নিয়ে খড়দার
ধার দিলে মতিরাম সর্দার।
শাঁখা চাই বলতেই শাঁখারি
বলে, শাঁখা আছে তিন টাকারই।
দর-কষাকষি নিয়ে অবশেষ
পুলিশ-থানায় হল সব শেষ।
সাসারামে চলে গেল লােক তার
খুঁজে যদি পাওয়া যায় মােক্তার।
সাক্ষীর খোঁজে গেল চেউকি,
গাঁজাখাের আছে সেথা কেউ কি।
সাথে নিয়ে ভুলুদা ও শশিদি
অনুকূল চলে গেছে জসিদি।
পথে যেতে বহু দুখ ভুগে রে
খোঁড়া ঘােড়া বেচে এল মুঙেরে।
মা ও দিকে বাতে তার পা খুঁড়ায়,
পড়ে আছে সাত দিন বাঁকুড়ায়।
ডাক্তার তিনকড়ি সাণ্ডেল
বদলি করেছে বাসা বাণ্ডেল।
তাই লােক পাঠায় কোদার্‌মায়,
চিঠি লিখে দিল সে ভোঁদার মায়।
সাতক্ষীরা এল চুপিচুপি সে,
তার পরে গেল পাঁচথুপি সে।

সেখানেতে মাছি প’ল ভাতে তার,
ঝগড়া হোটেলবাবু-সাথে তার।
অতুল গিয়েছে কবে নাসিকে,
সঙ্গে নিয়েছে তার মাসিকে।
রাঁধবার লােক আছে মাদ্রাজি
সাত টাকা মাইনেয় আধ-রাজি।
লালাচাঁদ যেতে যেতে পাকুড়ে
খিদেটা মেটায় শসা কাঁকুড়ে।
পৌঁছিয়ে বাহাদুরগঞ্জে
হাঁসফাঁস করে তার মন যে।
বাসা খুঁজে সাথী তার কাঙলা
খুলনায় পেল এক বাঙলা।
শুধু একখানা ভাঙা চৌকি,
এখানেই থাকে মেজো বউ কি।
নেমে গেল যেথা কানু জংশন,
ভিমরুলে করে দিল দংশন।
ডাক্তারে বলে চুন লাগাতে
জ্বালাটাকে চায় যদি ভাগাতে।
চুন কিনতে সে গেল কাট্‌নি,
কিনে এল আমড়ার চাটনি।
বিকানিরে পড়ল সে নাকালে,
উটে তাকে কী বিষম ঝাঁকালে।

বাড়িভাড়া করেছিল শ্বশুরই,
তাই খুশি মনে গেল মশুরি।
শ্বশুর উধাও হল না ব’লে,
জামাই কি ছাড়া পাবে তা ব’লে।
জায়গা পেয়েছে মালগাড়িতে,
হাত সে বুলাতেছিল দাড়িতে,
ঝকা থেকে মুরগিটা নাকে তার
ঠোকর মেরেছে কোন্‌ ফাঁকে তার।
নাকের গিয়েছে জাত রটে যায়,
গাঁয়ের মােড়ল সব চটে যায়।
কানপুর হতে এল পণ্ডিত,
বলে, এরে করা চাই দণ্ডিত।
লাশা হতে শ্বেত কাক খুঁজিয়া
নাসাপথে পাখা দাও গুঁজিয়া।
হাঁচি তবে হবে শত শতবার,
নাক তার শুচি হবে ততবার।
তার পরে হল মজা ভরপুর
যখন সে গেল মজাফরপুর।
শালা ছিল জমাদার থানাতে,
ভােজ দিল মােগলাই খানাতে।
জৌনপুরি কাবাবের গন্ধে
ভুরভুর করে সারা সন্ধে।

দেহটা এমনি তার তাতালে
যেতে হল মেয়ো হাসপাতালে
তার পরে কী যে হল শেষটা
খবর না পাই করে চেষ্টা॥

 উদয়ন ৭ মার্চ ১৯৪০