পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৬
পদাবলী-মাধুর্য্য

চণ্ডীদাসের ভাবধারা অনুসরণ করিয়া, সেই ধারায় উদ্ভূত হৃদয়োচ্ছ্বাস দিয়া তিনি চণ্ডীদাসের কবিতাটি সাজাইয়াছেন।

 আমি তৎকৃত যোজনাসহ কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত করিতেছি।

“আমি পরাণনাথেরে স্বপনে দেখিলাম, সে যে বসিয়া শিয়র পাশে,
নাসার বেশর পরশ করিয়া ঈষৎ মধুর হাসে।

কিবা রজনী শাওণ,   ঘন দেয়া গরজন,
   রিমি ঝিমি শবদে বরিবে,
পালঙ্কশয়ন রঙ্গে,   বিগলিত চীর অঙ্গে,
   আমি নিঁদ যাই মনের হরিষে।
শিখরে শিখণ্ডী রোল,   মত্ত দাদুরী বোল,
   কোকিলা ডাকিছে কুতূহলে,
ঝিঁ ঝিঁ ঝিমকি ঝাঁজে,   ডাহকী সে গরজে,
   আমি স্বপন দেখিলাম হেন কালে।

 আখরিয়া কৃষ্ণের হাসিটির ব্যাখ্যা করিয়া বলিবে—সে হাসি ছুরির মত, হৃদয় কাটিয়া যায়; মিষ্টত্বের এই তীক্ষ্ম আঘাত যিনি বুঝিয়াছেন, তিনিই এই কথার অর্থ বুঝিবেন। কোন সময়ে হাসি যে ধারাল ছুরির মত হৃদয় কাটিয়া যায়, তাহা কেহ কেহ হয়ত অনুভব করিয়া থাকিবেন।

 পরবর্ত্তী অংশে জ্ঞানদাস যে কয়েকটি ছত্র (কিবা রজনী শাওণ… আমি স্বপন দেখিলাম হেন ‍কালে) যোগ করিয়াছেন, তাহাতে মনের অবস্থার উপর রং ফলাইয়া তিনি বর্ষারাত্রের এই মিলনের রস প্রগাঢ় করিয়াছেন।

 যদিও কোন কোন সংগ্রহ-পুস্তকে সমস্ত পদটিই চণ্ডীদাসের ভণিতায় পাওয়া যায়, এই প্রকৃতি-বর্ণনার সুরটি কখনই চণ্ডীদাসের নহে, ইহা শব্দ-কুশলী পরবর্ত্তী কোন কবির রচনা। সে কবি কে, তাহা আবিস্কার