ব্যবহারকারী:Subrata Roy/শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত/আদিলীলা/পঞ্চম পরিচ্ছেদ
- বন্দেহনন্তাদ্ভুতৈশ্বর্য্যং
- শ্রীনিত্যানন্দমীশ্বরম্।
- যস্যেচ্ছয়া তৎস্বরূপ-
- মজ্ঞেনাপি নিরূপ্যতে।।১
অন্বয়ঃ।- অনন্তাদ্ভুতৈশ্বর্য্যম্ ঈশ্বরং শ্রীনিত্যানন্দমী বন্দে (অনন্ত ও অদ্ভুত ঐশ্বর্য্যসম্পন্ন শ্রীনিত্যানন্দ রূপ ঈশ্বরকে বন্দনা করিতেছি) যস্য ইচ্ছয়া অজ্ঞেন অপি তৎস্বরূপং নিরূপ্যতে (যাঁহার ইচ্ছায় নিতান্ত অজ্ঞ ব্যক্তিও তাঁহার স্বরূপ নির্ণয় করিতে পারে)।
অনুবাদ।- শ্রীনিত্যানন্দের বন্দনা করি যিনি অনন্ত ও অপূর্ব্ব ঐশ্বর্য্যশালী ঈশ্বর। এঁর কৃপায় এঁর স্বরূপ অজ্ঞ লোকেও জানতে পারে।।১।।
- জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।
- জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌরভক্তবৃন্দ।।
- ষষ্ঠ শ্লোকে কহিল কৃষ্ণচৈতন্য-মহিমা।
- পঞ্চ শ্লোকে কহি নিত্যানন্দ-তত্ত্ব সীমা।।
- সর্ব্ব অবতারী কৃষ্ণ - স্বয়ং ভগবান্।
- তাঁহার দ্বিতীয় দেহ - শ্রীবলরাম।।
- একই স্বরূপ দোঁহে ভিন্নমাত্র কায়।
- আদ্য কায়ব্যূহ - (১) কৃষ্ণ লীলার সহায়।।
- সেই কৃষ্ণ নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্যচন্দ্র।
- সেই বলরাম সঙ্গে - শ্রীনিত্যানন্দ।।
(১) যুদ্ধার্থ সেনা সন্নিবেশের নাম ব্যূহ্। সৈন্যাধ্যক্ষ পুরুষ যেমন ব্যূহের মধ্যে থাকিয়া কার্য্য করিয়া থাকে, সেইরূপ শ্রীকৃষ্ণ সঙ্কর্ষণাদি কায়ব্যূহের মধ্যে অবস্থিতি করিয়া লীলা করিতেছেন।
- তথাহি - শ্রীস্বরূপগোস্বামিকড়চায়াম্
- সঙ্কর্ষণঃ কারণতোয়শায়ী।
- গর্ভোদশায়ী চ পরোহব্ধিশায়ী।
- শেষশ্চ ষস্যাংশকলাঃ স নিত্যা-
- নন্দাখ্যরামঃ শরণং মমাস্তু।।২
এই শ্নোকের অন্বয় ও অনুবাদ ১ম পরিচ্ছেদের ৭ম শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।২।।
- শ্রীবলরাম গোঁসাঞি মূল সঙ্কর্ষণ।
- পঞ্চরূপ ধরি করেন কৃষ্ণের সেবন।।
- আপনে করেন কৃষ্ণ লীলার সহায় (২)।
- সৃষ্টিলীলা কার্য্য করে ধরি চারি কায়।।
- সৃষ্ট্যাদিক সেবা তাঁর আজ্ঞার পালন।
- শেষরূপে করে কৃষ্ণের বিবিধ সেবন (৩)।।
- সর্ব্বরূপে আস্বাদয়ে কৃষ্ণ-সেবানন্দ।
- সেই রাম শ্রীচৈতন্য সঙ্গে নিত্যানন্দ।।
- সপ্তম শ্লোকের (৪) অর্থ করি চারি শ্লোকে।
- যাতে নিত্যানন্দ তত্ত্ব জানে সর্ব্বলোকে।।
(২) 'পঞ্চরূপ' - সঙ্কর্ষণ, কারণার্ণবশায়ী, গর্ভোদশায়ী, ক্ষীরোদশায়ী, শেষ - এই পাঁচ রূপ। তাহার মধ্যে আপনি অর্থাৎ বলরাম সঙ্কর্ষণরূপে কৃষ্ণলীলায় সাহায্য করেন; আর কারণার্ণবশায়ী প্রভৃতি চারি রূপে সৃষ্টিকার্য্যাদি করেন।
(৩) 'বিবিধ সেবন' - বাসস্থান, শয্যা, আসন, পাদুকা, বস্ত্র, উপাধান, ছত্র প্রভৃতি ধারণ করিয়া শেষ রূপে সেবা করেন।
(৪) সপ্তম শ্লোকের - অর্থাৎ "সঙ্কর্ষণঃ কারণতোয়শায়ী ইত্যাদি শ্লোকের।
- তথাহি - শ্রীস্বরূপগোস্বামিকড়চায়াং -
- মায়াতীতে ব্যাপি-বৈকুণ্ঠলোকে
- পূর্ণৈশ্বর্য্যে শ্রীচতুর্ব্যূহমধ্যে।
- রূপং যস্যোদ্ভাতি সঙ্কর্ষণাখ্যং
- তং শ্রীনিত্যানন্দরামং প্রপদ্যে।।৩
এই শ্লোকের অন্বয় ও অনুবাদ ১ম পরিচ্ছেদে অষ্টম শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।৩।।
- প্রকৃতির পার পরব্যোম নামে ধাম (৫)।
- কৃষ্ণ বিগ্রহ যৈছে বিভুত্বাদি গুণবান্।।
(৫) 'প্রকৃতির পার' - মায়াতীত। 'পরব্যোম' - মহাবৈকুণ্ঠ।
- সর্ব্বগ অনন্ত বিভু বৈকুণ্ঠাদি ধাম (১)।
- কৃষ্ণ কৃষ্ণ-অবতারের তাহাঞি বিশ্রাম।।
- তাহার উপরিভাগে - কৃষ্ণলোকখ্যাতি।
- দ্বারকা মথুরা গোকুল - ত্রিবিধত্বে স্থিতি।।
- সর্ব্বোপরি শ্রীগোকুল ব্রজলোকধাম।
- শ্রীগোলোক শ্বেতদ্বপ বৃন্দাবন নাম।।
- সর্ব্বগ অনন্ত বিভু কৃষ্ণতনু সম।
- উপর্য্যধো (২) ব্যাপি আছে - নাহিক নিয়ম।।
- ব্রহ্মাণ্ডে প্রকাশ তাঁর কৃষ্ণের ইচ্ছায়।
- একই স্বরূপ তার, নাহি দুই কায়।।
- চিন্তামণি ভূমি কল্পবৃক্ষময় বন।
- চর্ম্মচক্ষে দেখে তারে প্রপঞ্চের সম (৩)।।
- প্রেমনেত্রে দেখে তার স্বরূপ প্রকাশ।
- গোপ-গোপী সঙ্গে যাঁরা কৃষ্ণের বিলাস।।
(১) যেমন কৃষ্ণবিগ্রহ বিভূত্বাদি গুণবিশিষ্ট, এই পরব্যোমাদি ভগবদ্ধামসকলও সর্ব্বগ অনন্ত বিভু।
(২) 'উপর্য্যধো' - উপরে নীচে।
(৩) 'চর্ম্মচক্ষে' - প্রেমহীন চক্ষে। 'প্রপঞ্চের সম' - পঞ্চভূতের দ্বারা যে সকল বস্তু সৃষ্ট হয়, তাহার নাম প্রপঞ্চ, তাহার সমান।
- তথাহি - ব্রহ্মসংহিতায়াং (৫ - ২৫)
- চিন্তামণিপ্রকরসদ্মসু কল্পবৃক্ষ-
- লক্ষাবৃতেষু সুরভীরভিপালয়ন্তম্।
- লক্ষ্মীসহস্রশতসম্ভ্রমসেব্যমানং
- গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৪
অন্বয়ঃ।- কল্পবৃক্ষ-লক্ষাবৃতেষু (লক্ষ লক্ষ কল্পবৃক্ষবেষ্টিত) চিন্তামণিপ্রকরসদ্মসু (চিন্তামণি নির্ম্মিত গৃহসমূহে) সুরভীঃ অভিপালয়ন্তং লক্ষ্মীসহস্রশতসম্ভ্রমসেব্যমানং তম্ আদিপুরুষং গোবিন্দম্ অহং ভজামি (শত সহস্র লক্ষ্মী কর্ত্তৃক সম্ভ্রব সহকারে সেব্যমান হইয়া যিনি কামধেনুবৃন্দকে লালনপালন করিতেছেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি)।
অনুবাদ।- আদিপুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি। লক্ষ লক্ষ কল্পতরুর আড়াল দেওয়া চিন্তামণিময় মন্দিরে ইতি শত-সহস্র লক্ষ্মীর দ্বারা সেব্যমান হয়ে স্বয় সুরভি গাভীদের পালন করেন।।৪।।
- মথুরা দ্বারকায় নিজ রূপ প্রকাশিয়া।
- নানারূপে বিলসয়ে চতুর্ব্যূহ হৈঞা।।
- বাসুদেব সঙ্কর্ষণ প্রদ্যুম্ন অনিরুদ্ধ।
- সর্ব্বচতুর্ব্যূহ অংশী তুরীয় বিশুদ্ধ (৪)।।
- এই তিন লোকে কৃষ্ণ কেবল লীলাময় (৫)।
- নিজগণ লঞা খেলে অনন্ত সময়।।
- পরব্যোম মধ্যে করি স্বরূপ প্রকাশ।
- নারায়ণ রূপে করে বিবিধ বিলাস।।
- স্বরূপ বিগ্রহ কৃষ্ণের কেবল দ্বিভুজ।
- নারায়ণ রূপে সেই তনু চতুর্ভুজ।।
- শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম মহৈশ্বর্য্যময়।
- শ্রী ভূ লীলা শক্তি যাঁর চরণ সেরয়।।
- যদ্যপি কেবল তাঁর ক্রীড়ামাত্র ধর্ম্ম।
- তথাপি জীবের কৃপায় করে এত কর্ম্ম।।
- সালোক্য সামীপ্য সার্ষ্টি সারূপ্য প্রকার।
- চারি মুক্তি দিয়া করে জীবের নিস্তার।।
- ব্রহ্মসাযুজ্য মুক্তের তাঁহা নাহি গতি।
- বৈকুণ্ঠ বাহিরে হয় তা সভার স্থিতি।।
- বৈকুণ্ঠ বাহিরে এক জ্যোতির্ম্ময় মণ্ডল।
- কৃষ্ণের অঙ্গের প্রভা পরম উজ্জ্বল।।
- সিদ্ধলোক নাম তার প্রকৃতির পার।
- চিৎশক্তি তাহা নাহি চিচ্ছক্তি বিকার (৬)।।
- সূর্য্যের মণ্ডল যৈছে বাহিরে নির্ব্বিশেষ।
- ভিতরে সূর্য্যের রথ আদি সবিশেষ।।
(৪) মথুরা ও দ্বারকায় বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, প্রদ্যুম্ন ও অনিরুদ্ধ - এই চতুর্ব্যুহ সর্ব্বস্থানের চতুর্ব্যুহের অংশী (আদিকারণ) এবং তুরীর অর্থাৎ মায়াগন্ধহীন।
(৫) 'এই তিন লোকে' - গোকুল, মথুরা এবং দ্বারকায়।
(৬) 'চিৎশক্তি' - কিন্তু তথায় চিচ্ছক্তিবিকার অর্থাৎ চিদানন্দময় গৃহপরিচ্ছদাদিরূপ পরিণতি নাই। (ঝামটপুরের শ্রীগ্রন্থের পাঠ)
- তথাহি - ভক্তিরসামৃতসিন্ধৌ (১।২।১৩৬)
- যদরীণাং প্রিয়াণাঞ্চ
- প্রাপ্যমেকমিবোদিতম্।
- তদ্ব্রহ্মকৃষ্ণয়োরৈক্যাৎ
- কিরণার্কোপমাজুষোঃ।।৫
অন্বয়ঃ।- যৎ অরীণাং (কংসশিশুপালাদির) প্রিয়াণাং (ব্রজবাসিগণের) একম ইব প্রাপ্যম্ ইতি উদিতং (একই প্রাপ্যস্থান বলিয়া কথিত হইয়াছে) তৎ কিরণার্কোপমাজুষোঃ (তাহা সূর্য্যকিরণ ও সূর্য্যের উপমার ন্যায়) ব্রহ্মকৃষ্ণয়োঃ ঐক্যাৎ (ব্রহ্ম ও কৃষ্ণের একত্ব হইতে সিদ্ধ)।
অনুবাদ।- সূর্য্য ও সূর্য্যকিরণ অভিন্ন। কৃষ্ণ ও ব্রহ্ম অভিন্ন। তাই বৈরী ও বন্ধুর প্রাপ্যকে শাস্ত্র এক বলে নির্দ্দিষ্ট করেছে।।৫।।
- তৈছে পরব্যোমে নানা চিচ্ছক্তিবিলাস।
- নির্ব্বিশেষ জ্যোতির্বিম্ব বাহিরে প্রকাশ।।
- নির্ব্বিশেষ ব্রহ্ম সেই কেবল জ্যোতির্ম্ময়।
- সাযুজ্যের অধিকারী তাঁহা পায় লয়।।
- তথাহি রসামৃত-সিন্ধু-ধৃতং (১।২।১৩৮)
- ব্রহ্মাণ্ডপুরাণবচনমঃ-
- সিদ্ধলোকস্তু তমসঃ
- পারে যত্র বসন্তি হি।
- সিদ্ধা ব্রহ্মসুখে মগ্না
- দৈত্যাশ্চ হরিণা হতাঃ।।৬
অন্বয়ঃ।- তমসঃ (মায়ার) পারে তু সিদ্ধলোকঃ (পারে সিদ্ধলোক) যত্র ব্রহ্মসুখে মগ্নাঃ সিদ্ধাঃ চ (সেখানে ব্রহ্মসুখে মগ্ন সিদ্ধগণ) হরিণা হতাঃ দৈত্যাঃ হি বসন্তি (এবং শ্রীহরি-কর্ত্তৃক হত দৈত্যগণ বাস করিয়া থাকে(।
অনুবাদ।- মায়াকে উত্তীর্ণ হ'য়ে আনন্দময় সিদ্ধলোক। সেখানে ব্রহ্মসুখে মগ্ন হ'য়ে সিদ্ধেরাও যেমন বাস করেন তেমনি বাস করে শ্রীকৃষ্ণ-নিহত দৈত্যেরাও।।৬।।
- সেই পরব্যোমে নারায়ণের চারিপাশে।
- দ্বারকা চতুর্ব্যূহ দ্বিতীয় প্রকাশে।।
- বাসুদেব সঙ্কর্ষণ প্রদ্যুম্নানিরুদ্ধ।
- দ্বিতীয় চতুর্ব্যূহের এই তুরীয় বিশুদ্ধ।।
- তাঁহা (১) যে রামের রূপ মহাসঙ্কর্ষণ।
- চিচ্ছক্তিআশ্রয় তিহোঁ কারণের কারণ (২)।।
- চিচ্ছক্তি বিলাস এক শুদ্ধ সত্ত্ব নাম (৩)।
- শুদ্ধ সত্ত্বময় যত বৈকুণ্ঠাদি ধাম।।
- ষড়্বিধ ঐশ্বর্য্য তাঁহা - সকল চিন্ময়।
- সঙ্কর্ষণের বিভূতি সব জানিহ নিশ্চয়।।
- জীব নাম তটস্থাখ্য এক শক্তি হয়।
- মহাসঙ্কর্ষণ সর্ব্ব জীবের আশ্রয়।।
- যাহা হৈতে বিশ্বোৎপত্তি যাহাতে প্রলয়।
- সেই পুরুষের সঙ্কর্ষণ সমাশ্রয় (৪)।।
- সর্ব্বাশ্রয় সর্ব্বাদ্ভুত ঐশ্বর্য্য অপার।
- অনন্ত কহিতে নারে মহিমা যাঁহার।।
- তুরীয় বিশুদ্ধ সত্ত্ব সঙ্কর্ষণ নাম।
- তিহোঁ যার অংশ সেই নিত্যানন্দ রাম।।
- অষ্টম শ্লোকের কৈল সংক্ষেপে বিবরণ।
- নবম শ্লোকের অর্থ শুন দিয়া মন।।
(১) 'তাঁহা' - পরব্যোমে।
(২) 'তিঁহো' - মহাসঙ্কর্ষণ। 'কারণের' - মহাবিষ্ণুর। 'কারণ' - অবতারী।
(৩) অর্থাৎ শুদ্ধসত্ত্ব চিচ্ছক্তির একটি বৃত্তি।
(৪) 'সেই পুরুষের' - মহাবিষ্ণুর। 'সমাশ্রয়' - অংশী, অবতারী।
- তথাহি - শ্রীস্বরূপগোস্বামিকড়চায়াঃ শ্লোকঃ
- মায়াভর্ত্তাজাণ্ডসঙ্ঘাশ্রয়াঙ্গঃ
- শেতে সাক্ষাৎ কারণাম্ভোধিমধ্যে।
- যশ্যৈকাংশঃ শ্রীপুমানাদিদেব -
- স্তং শ্রীনিত্যানন্দরামং প্রপদ্যে।।৭
ইহার অন্বয়ঃ ও অনুবাদ ১ম পরিচ্ছেদে ৯ম শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।৭।।
- বৈকুণ্ঠ বাহিরে যেই জ্যোতির্ম্ময় ধাম।
- তাহার বাহিরে কারণার্ণব নাম।।
- বৈকুণ্ঠ বেড়িয়া এক আছে জলনিধি।
- অনন্ত অপার তার নাহিক অবধি।।
- বৈকুণ্ঠের পৃথিব্যাদি সকল চিন্ময়।
- মায়িক ভূতের তথি জন্ম নাহি হয়।।
- চিন্ময় জল সেই পরম কারণ।
- যার এক কণা গঙ্গা জগৎ-পাবন (১)।।
- সেই ত কারণার্ণবে সেই সঙ্কর্ষণ।
- আপনার এক অংশে (২) করেন শয়ন।।
- মহৎস্রষ্টা পুরুষ তিহোঁ জগৎকারণ।
- আদ্য অবতার করে মায়ার ঈক্ষণ।।
- মায়াশক্তি রহে কারণাব্ধির বাহিরে (৩)।
- কারণ সমুদ্র মায়া পরশিতে নারে।।
- সেইত মায়ার দুইবিধ অবস্থিতি।
- জগতের উপাদান প্রধান প্রকৃতি।।
- জগৎকারণ নহে প্রকৃতি জড়রূপা।
- শক্তি সঞ্চারিয়া তারে কৃষ্ণ করেন কৃপা (৪)।।
- কৃষ্ণ শক্ত্যে প্রকৃতি হয় গৌণ কারণ।
- অগ্নিশক্ত্যে লৌহ যৈছে করয়ে জারণ (৫)।।
- অতএব কৃষ্ণ মূল জগৎকারণ।
- প্রকৃতি কারণ যৈছে অজা-গলস্তন (৬)।।
(১) পাঠান্তর 'পতিত-পাবন'।
(২) 'এক অংশে' - মহাবিষ্ণুরূপে।
(৩) এই মহাবিষ্ণুই কারণার্ণবে শয়ন করিয়া কারণার্ণবের বাহিরে স্থিত মায়ার প্রতি ঈক্ষণ করেন তন্নিমিত্ত মায়া মহৎতত্ত্ব প্রসব করেন।
(৪) উপাদান এবং নিমিত্তরূপে মায়া দুই প্রকারে অবস্থান করেন। তন্মধ্যে উপাদানরূপে প্রধান ও প্রকৃতি নাম হয়, এবং নিমিত্তাংশে মায়াই নাম। যাহাকে গ্রহণ করিয়া কার্য্য হয়, তাহার নাম উপাদান। যেমন কুণ্ডলের উপাদান স্বর্ণ, ও ঘটের উপাদান মৃত্তিকা, এবং যাহা বিনা যাহা হয় না, তাহার নাম নিমিত্ত। যেমন কুণ্ডলের নিমিত্ত স্বর্ণকার ও ঘটের নিমিত্ত কুম্ভকার প্রভৃতি। এইরূপ, এক মায়া জগতের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ হইলেও জড়ত্বনিবন্ধন কারণ হইতে পারে না; এই নিমিত্ত শ্রীকৃষ্ণ করুণা করিয়া মায়াতে শক্তিসঞ্চার-পূর্ব্বক তদ্দ্বারা সৃষ্টি করেন।
(৫) 'জারণ' - দহন।
(৬) প্রকৃতি কারণের ন্যায় প্রতীয়মান হইলেও কারণ নহে। 'অজা-গলস্তন' - নিরর্থক বস্তু, ছাগীর গলস্থিত স্তনবৎ মাংসপিণ্ডের ন্যায় যাহার বিশেষ কোন প্রয়োজনীয়তা নাই এরূপ বস্তু।
- মায়া অংশে কহি তারে নিমিত্ত কারণ।
- সেই নহে যাতে কর্ত্তা হেতু নারায়ণ।।
- ঘটের নিমিত্ত হেতু যৈছে কুম্ভকার।
- তৈছে জগতের কর্ত্তা পুরুষাবতার (৭)।।
- কৃষ্ণকর্ত্তা মায়া তাঁর করেন সহায়।
- ঘটের কারণ চক্রদণ্ডাদি উপায়।।
- দূর হৈতে পুরুষ করে মায়াতে অবধান (৮)।
- জীবরূপ বীর্য্য তাতে করেন আধান।।
- এক অঙ্গাষাবে (৯) করে মায়াতে মিলন।
- মায়া হৈতে জন্মে তবে ব্রহ্মাণ্ডের গণ।।
- অগণ্য অনন্ত যত অণ্ড সন্নিবেশ (১০)।
- ততরূপে পুরুষ করে সভাতে প্রবেশ।।
- পুরুষ নাসাতে যবে বাহিরায় শ্বাস।
- নিশ্বাস সহিতে হয় ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশ।।
- পুনরপি শ্বাস যবে প্রবেশে অন্তরে।
- শ্বাস সহ ব্রহ্মাণ্ড পৈশে পুরুষ শরীরে।।
- গবাক্ষের রন্ধ্রে যেন ত্রসরেণু (১১) চলে।
- পুরুষের লোমকূপে ব্রহ্মাণ্ডের জালে।।
(৭) 'পুরুষাবতার' - প্রথম পুরুষ কারণার্ণবশায়ী মহাবিষ্ণু।
(৮) 'অবধান' - ঈক্ষণ, অবলোকন, দৃষ্টিপাত।
(৯) 'অঙ্গাভাসে' - অঙ্গচ্ছটায়।
(১০) 'অণ্ড সন্নিবেশ' - ব্রহ্মাণ্ডের অবয়ব সংস্থাপন।
(১১) 'ত্রসরেণু' - সূর্য্যকিরণে গবাক্ষরন্ধ্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেণু দেখা যায়, তাহার নাম ত্রসরেণু। (মতান্তরে ৩০টি) পরমাণু একত্র হইলে ত্রসরেণু হয়।
- তথাহি - ব্রহ্মসংহিতায়াং (৫।৪৮) শ্লোকঃ
- যস্যৈকনিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য
- জীবনন্তি লোমবিলজা জগদণ্ডনাথাঃ।
- বিষ্ণুর্মহান্ স ইহ যস্য কলাবিশেষো
- গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৮
অন্বয়ঃ।- অথ লোমবিলজাঃ (লোমকূপজাত) জগদণ্ডনাথাঃ (ব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি ব্রহ্মাদি) যস্য একনিশ্বসিতকালম্ অবলম্ব্য জীবনন্তি (যাহার একটি শ্বাসত্যাগের কাল অবলম্বনপূর্ব্বক জীবিত থাকেন) স মহান্ বিষ্ণু ইহ যস্য কলাবিশেষঃ (সেই মহাবিষ্ণু যাঁহার কলাবিশেষ) তম্ আদিপুরুষং গোবিন্দম্ অহং ভজামি (আমি সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি)।
অনুবাদ।- আমি আদিপুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি। এঁরই কলাবিশেষ মহাবিষ্ণু - যাঁর লোমকূপ থেকে জাত হয়ে ব্রহ্মাদি দেবতা তাঁরই নিঃশ্বাস-পতনকাল পর্য্যন্ত মাত্র বিদ্যমান থাকেন।।৮।।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।১৪।১১)
- ক্কাহং তমোমহদহংখচরাগ্নিবার্ভূ -
- সংবেষ্টিতাণ্ডঘটসপ্তবিতস্তিকায়ঃ।
- ক্কেদৃগ্বিধাবিগণিতাণ্ডপরমাণুচর্য্যা -
- বাতাধ্বরোমবিবরস্য চ তে মহিত্বম্।।৯
অন্বয়ঃ।- ব্রহ্মা বলিতেছেন - তমোমহদহংখচরাগ্নিবার্ভূ-সংবেষ্টিতাণ্ড-ঘটসপ্তবিতস্তিকায়ঃ অহং ক্ক (প্রকৃতি, মহত্ত্তত্ত্ব, মহদঙ্কার, আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মৃত্তিকা বেষ্টিত অণ্ড ঘটে সমাপ্ত বিতস্তি-অর্থাৎ সাড়ে তিন হাত শরীর বিশিষ্ট আমিই বা কোথায়?) চ (পুনঃ) ঈদৃগ্বিধাবিগণিতাণ্ডপরমাণুচর্য্যা-বাতাধ্বরোমবিবরস্য তে মহিত্বং ক্ক (আর অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডরূপ পরমাণু সকলের পরিভ্রমণের জন্য বায়ু চলাচলের গবাক্ষের ন্যায় যাহার লোমকূপ সেই তোমার মহিমাই বা কোথায়?)
অনুবাদ।- আপনার মহিমা কোথায়! আর আমিই বা কোথায়? ক্ষিতি-অপ্-তেজ-মরুৎ-ব্যোম-অহং-মহৎ-প্রকৃতি-পরিবেষ্টিত অণ্ডঘটে সার্দ্ধত্রিহস্ত-পরিমিত আমি। আর আপনার রোমবিবরগুলিতেও পূর্ব্বোক্ত অসংখ্য অণ্ড পরমাণু বাতায়নপথে ধূলিকণার মত প্রচলিত।।৯।।
- অংশের অংশ যেই কলা তার নাম।
- গোবিন্দের প্রতিমূর্ত্তি (১) শ্রীবলরাম।।
- তাঁর এক স্বরূপ শ্রীমহাসঙ্কর্ষণ।
- তাঁর অংশ পুরুষ (২) হয় কলায়ে গণন।।
(১) 'প্রতিমূর্ত্তি' - বিলাসমূর্ত্তি।
(২) 'তার অংশ পুরুষ' - অংশ পুরুষ কারণার্ণবশায়ী।
- তথাহি - লঘুভাগবতামৃতে পূর্ব্বখণ্ডে
- নবমাঙ্কধৃত সাত্বততন্ত্র-বচনম্
- বিষ্ণোস্তু ত্রীণি রূপাণি পুরুষাখ্যান্যথো বিদুঃ।
- একন্তু মহতঃ স্রষ্টৃ দ্বিতীয়ন্ত্বণ্ডসংস্থিতম্।
- তৃতীয়ং সর্ব্বভূতস্থং তানি জ্ঞাত্বা বিমুচ্যতে।।১০
অন্বয়ঃ।- তু বিষ্ণোঃ পুরুষাখ্যানি ত্রীণি রূপাণি অথো বিদুঃ (সেই বিষ্ণুর পুরুষনামে কথিত তিনটি রূপ আছে বলিয়া পণ্ডিতগণ জানেন) তু মহতঃ স্রষ্টৃ একং (তাহার মধ্যে মহত্তত্ত্বের স্রষ্টা একটি), তু অণ্ডসংস্থিতং দ্বিতীয়ং (দ্বিতীয়টি গর্ভোদকশায়িরূপ), সর্ব্বভূতস্থং তৃতীয়ং (তৃতীয়টি সর্ব্বভূতের অন্তর্য্যামিরূপ), তানি জ্ঞাত্বা বিমুচ্যতে (এই তিনটিকে জানিতে পারিলে মনুষ্য মুক্তি লাভ করে)।
অনুবাদ।- বিষ্ণুর পুরুষাখ্য তিনটি রূপ আছে। প্রথম পুরুষ মহতের স্রষ্টা, দ্বিতীয় পুরুষ অণ্ডসংস্থিত ও তৃতীয় পুরুষ সর্ব্বভূতস্থ। এই তিনটি রূপ জানলে মুক্তিলাভ হয়।।১০।।
- যদ্যপি কহিয়ে তারেঁ কৃষ্ণের কলা করি।
- মৎস্য-কূর্ম্মাদ্যবতারের তেহোঁ অবতারী।।
- তথাহি-শ্রীমদ্ভাগবতে (১।৩।২৮)
- এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ং।
- ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে।।১১
এই শ্লোকের অন্বয়ঃ ও বঙ্গানুবাদ ২য় পরিচ্ছেদে ১২ শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।১১।।
- সেই পুরুষ সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের কর্ত্তা।
- নানা অবতার করে জগতের ভর্ত্তা।।
- সৃষ্টাদি নিমিত্তে যেই অংশের অবধান।
- সেইত অংশের কহি অবতার নাম।।
- আদ্য অবতার মহাপুরুষ ভগবান্।
- সর্ব্ব অবতার বীজ সর্ব্বাশ্রয়ধাম।।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (২।৬।৪২)
- আদ্যোহবতারঃ পুরুষঃ পরস্য
- কালঃ স্বভাবঃ সদসন্মনশ্চ।
- দ্রব্যং বিকারো গুণ ইন্দ্রিয়াণি
- বিরাট্ স্বরাট্ স্থাস্নু চরিষ্ণু ভূম্নঃ।।১২
অন্বয়ঃ।- ভূম্নঃ পরস্য আদ্যোহবতারঃ পুরুষঃ (যিনি প্রথম পুরুষের পরবর্ত্তী তিনিই আদ্য অবতার) 'অতঃপরং' কালঃ স্বভাবঃ সদসৎ মন দ্রব্যং বিকারঃ গুণঃ ইন্দ্রিয়াণি বিরাট্ স্বরাট্ স্থাস্নু চরিষ্ণু (তাঁহার পরেই কাল, স্বভাব, কার্য্যকারণ মন, দ্রব্য - অর্থাৎ মহাভূত, অহঙ্কার, সত্ত্বাদি গুণত্রয়, ইন্দ্রিসমূহ, বিরাট্ অর্থাৎ সমষ্টি ব্রহ্মাণ্ড, স্বরাট্ অর্থাৎ সমষ্টিজীব, স্থাবর ও জঙ্গমাদি সৃষ্টি হইয়া থাকে)।
অনুবাদ।- সেই পুরুষোত্তমের আদি অবতার যে পুরুষ তাঁরই বিভূতি - কাল, স্বভাব, সৎ, অসৎ, মন, দ্রব্য, বিকার, গুণ, ইন্দ্রিয়, বিরাট্, স্বরাট্ ও সমস্ত স্থাবর জঙ্গম।।১২।।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (১।৩।১)
- জগৃহে পৌরুষং রূপং ভগবান্মহদাদিভিঃ।
- সম্ভূতং ষোড়শকলমাদৌ লোকসিসৃক্ষয়া।।১৩
অন্বয়ঃ।- [শ্রীসৃতশৌনকাদিকে বলিতেছেন] - ভগবান লোকসিসৃক্ষয়া (ভগবান্ লোকসৃষ্টির ইচ্ছা হেতু অর্থাৎ সৃষ্টির আরম্ভে) আদৌ মহদাদিভিঃ সম্ভূতং ষোড়শকলং পৌরুষং রূপং জগৃহে (মহদাদিসম্ভূত ষোড়শ কলাবিশিষ্ট (১) পুরুষরূপ গ্রহণ করিলেন)।
অনুবাদ।- লোকসৃষ্টির উদ্দেশ্যে শ্রীভগবান্ মহৎ প্রভৃতি থেকে জাত ষোড়শ-কলা-যুক্ত পৌরুষ রূপ গ্রহণ করলেন।।১৩।।
(১) একাদশ ইন্দ্রিয় ও পঞ্চমহাভূত - এই ষোড়শকলা।
- যদ্যপি সর্ব্বাশ্রয় তিহোঁ তাঁহাতে সংসার।
- অন্তরাত্মা রূপে তাঁর জগৎ আধার।।
- প্রকৃতি সহিত তাঁর উভয় সম্বন্ধ (২)।
- তথাপি প্রকৃতি সহ নহে স্পর্শ-গন্ধ।।
(২) 'উভয় সম্বন্ধ' - প্রকৃতি তাঁহাতে এবং তিনি অন্তর্য্যামিরূপে প্রকৃতিতে।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (১।১১।৩৯)
- এতদীশনমীশস্যপ্রকৃতিস্থোহপি তদ্গুণৈঃ।
- ন যুজ্যতে সদাত্মস্থৈর্যথা বুদ্ধিস্তদাশ্রয়া।।১৪।।
এই শ্লোকের অন্বয়ঃ ও অনুবাদ ২য় পরিচ্ছেদে ১০ শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।১৪।।
- এই মত গীতাতেহো পুনঃ পুনঃ কয়।
- সর্ব্বদা ঈশ্বরতত্ত্ব অচিন্ত্যশক্তি হয়।।
- আমিত (৩) জগতে বসি জগৎ আমাতে।
- না আমি জগতে বসি না আমা জগতে।।
- অচিন্ত ঐশ্বর্য্য এই জানিহ আমার।
- এইত গীতার অর্থ কৈল পরচার।।
- সেইত পুরুষ যার অংশ ধরে নাম।
- চৈতন্যের সঙ্গে সেই নিত্যানন্দ রাম।।
- এইত নবম শ্লোকের অর্থ-বিবরণ।
- দশম শ্লোকের অর্থ শুন দিয়া মন।।
(৩) আমি জগতে বাস করি সুতরাং জগৎ আমার আশ্রয়, এবং জগৎ আমাতে বাস করে অতএব আমিও জগতে আশ্রয়। এইরূপে আশ্রয়-আশ্রিত বা আধার-আধেয় সম্বন্ধ থাকিলেও আমি জগতে বাস করি না, জগৎ আমাতে বাস করে। আমার অচিন্ত্য ঐশ্বর্য্যই ইহার একমাত্র কারণ।
- শ্রীস্বরূপগোস্বামিকড়চোক্তশ্লোকঃ
- যস্যাংশাংশঃ শ্রীলগর্ভোদশায়ী
- যন্নভ্যব্জং লোকসঙ্ঘাতনালম্।
- লোকস্রষ্টুঃ সূতিকাধাম ধাতু-
- স্তং শ্রীনিত্যানন্দরামং প্রপদ্যে।।১৫
এই শ্লোকের অন্বয়ঃ ও অনুবাদ ১ম পরিচ্ছেদে ১১ শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।১৫।।
- ব্রহ্মাণ্ড প্রমাণ পঞ্চাশৎকোটি যোজন।
- আয়াম (১) বিস্তার হয়ে দুই এক সম।।
- জলে ভরি অর্দ্ধ তাহা কৈল নিজ বাস।
- আর অর্দ্ধে কৈল চৌদ্দ ভুবন প্রকাশ।।
- তাহাই প্রকট কৈল বৈকুণ্ঠ নিজধাম।
- শেষ শয়ন জলে করিল বিশ্রাম।।
- অনন্ত-শয্যাতে তাঁহা করিল শয়ন (২)।
- সহস্র মস্তক তাঁর সহস্র বদন।।
- সহস্র নয়ন হস্ত সহস্র চরণ।
- সর্ব্ব অবতার বীজ (৩) জগৎ কারণ।।
- তাঁর নাভিপদ্ম হৈতে উঠিল এক পদ্ম।
- সেই পদ্ম হৈল ব্রহ্মার জন্মসদ্ম (৪)।।
- সেই পদ্মনালে হৈল চৌদ্দ ভুবন।
- তেহোঁ ব্রহ্মা হঞা সৃষ্টি করিল সৃজন।।
- বিষ্ণুরূপ হঞা করে জগৎ পালনে।
- গুণাতীত বিষ্ণু - স্পর্শ নাহি মায়া গুণে।।
- রুদ্ররূপ ধরি করে জগৎ সংহার।
- সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় ইচ্ছায় যাঁহার।।
- হিরণ্যগর্ভ অন্তর্য্যামী জগৎ কারণ।
- যাঁর অংশ করি করে বিরাট্ কল্পন।।
- হেন নারায়ণ (৫) যার অংশেরও অংশ।
- সেই প্রভু নিত্যানন্দ সর্ব্ব অবতংস (৬)।।
- দশম শ্লোকের অর্থ কৈল বিবরণ।
- একাদশ শ্লোকের অর্থ শুন দিয়া মন।।
(১) 'আয়াম' - দৈর্ঘ্য। 'বিস্তার' - প্রস্থ। এই দুইয়ের এক পরিমাণ।
(২) 'শেষ শয়ন ....... করিল শয়ন'। জলে - গর্ভোদকের জলে। শেয় শয়ন - অনন্তরূপ শয্যা। 'অনন্ত-শয্যাতে তাঁহা করিল শয়ন', ইহার অর্থ - গর্ভোদকে যে অনন্তরূপ শয্যা তথায় শয়ন করিলেন।
(৩) 'সর্ব্ব অবতার বীজ' - এই দ্বিতীয় পুরুষ মৎস্য কূর্ম্মাদি অবতারের অবতারী (মূল)।
(৪) সদ্ম - গৃহ, অর্থাৎ সেই পদ্মে ব্রহ্মার জন্ম হয়।
(৫) নারায়ণ - গর্ভোদশায়ী।
(৬) অবতংস - কর্ণভূষণ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ।
- শ্রীস্বরূপগোস্বামিকড়চায়াম্
- যস্যাংশাংশাংশঃ পরাত্মাখিলানাং
- পোষ্টা বিষ্ণুর্ভাতি দুগ্ধাব্ধিশায়ী।
- ক্ষৌণীভর্ত্তা যৎকলা সোহপ্যনন্ত-
- স্তং শ্রীনিত্যানন্দরামং প্রপদ্যে।।১৬
এই শ্লোকের অন্বয়ঃ ও অনুবাদ ১ম পরিচ্ছেদে ১১ শ্লোকে দ্রষ্টব্য।।১৬।।
- নারায়ণের নাভিনাল মধ্যে ত ধরণী।
- ধরণীর মধ্যে সপ্ত সমুদ্র যে গণি।।
- তাঁহা ক্ষীরোদধি মধ্যে শ্বেতদ্বীপ নাম।
- পালয়িতা বিষ্ণু তাঁর সেই নিজধাম।।
- সকল জীবের তেহোঁ জগতের স্বামী।।
- যুগ-মন্বন্তরে করি নানা অবতার।
- ধর্ম্ম সংস্থাপন করে অধর্ম্ম সংহার।।
- দেবগণ নাহি পায় যাঁহার দর্শন।
- ক্ষীরোদক-তীরে যাই করেন স্তবন।।
- তবে অবতরি করে জগৎ পালন।
- অনন্ত বৈভব তাঁর নাহিক গণন।।
- সেই বিষ্ণু হয় যাঁর অংশাংশের অংশ (৮)।
- সেই প্রভু নিত্যানন্দ সর্ব্ব-অবতংস।।
- সেই বিষ্ণু শেষরূপে ধরেন ধরণী (৯)।
- কাঁহা আছে মহী শিরে হেন নাহি জানি।।
- সহস্র বিস্তীর্ণ যাঁর ফণার মণ্ডল।
- সূর্য্য জিনি মণিগণ করে ঝলমল।।
- পঞ্চাশৎ কোটি যোজন পৃথিবী বিস্তার।
- যার এক ফণে রহে সর্ষপ আকার।।
(৭) 'তেহোঁ' - তৃতীয় পুরুষাবতার ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণু।
(৮) 'অংশাংশের অংশ'; অংশ - কারণার্ণবশায়ী, অংশাংশ - গর্ভোদশায়ী; অংশাংশের অংশ - ক্ষীরোদশায়ী।
(৯) 'সেই বিষ্ণু' - ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণু। 'শেষরূপে' - অনন্তানাগরূপে।
- সেইত অনন্ত শেষ ভক্ত-অবতার।
- ঈশ্বরের সেবা বিনা নাহি জানে আর।।
- সহস্র বদনে করে কৃষ্ণগুণ গান।
- নিরবধি গুণ গান - অন্ত নাহি পান।।
- সনকাদি ভাগবত শুনে যাঁর মুখে (১)।
- ভগবানের গুণ কহে ভাসে প্রেমসুখে।।
- ছত্র পাদুকা শয্যা উপাধান (২) বসন।
- আরাম (৩) আবাস যজ্ঞসূত্র সিংহাসন।।
- এত মূর্ত্তি ভেদ করি কৃষ্ণসেবা করে।
- কৃষ্ণের শেষতা (৪) পাঞা শেষনাম ধরে।।
- সেইত অনন্ত যাঁর কহি এক কলা।
- হেন প্রভু নিত্যানন্দ কে জানে তাঁর খেলা।।
- এ সব প্রমাণে জানি নিত্যানন্দ সীমা।
- তাঁহাকে অনন্ত কহি কি তাঁর মহিমা।।
- অথবা ভক্তের বাক্য মানি সত্য করি।
- সেহোত সম্ভবে তাতে যাতে অবতারী।।
- অবতার-অবতারী অভেদ যে জানে।
- পূর্ব্বে যৈছে কৃষ্ণে কেহো কাহো (৫) করি মানে।।
- কেহো বলে - কৃষ্ণ সাক্ষাৎ নর নারায়ণ।
- কেহো কহে - কৃষ্ণ হয় সাক্ষাৎ বামন।।
- কেহো কহে - কৃষ্ণ ক্ষীরোদশায়ী অবতার।
- অসম্ভব নহে সত্য বচন সবার।।
- কৃষ্ণ যবে অবতরে সর্ব্বাংশে আশ্রয়।
- সর্ব্ব অংশ আসি তবে কৃষ্ণেতে মিলয়।।
- যেই যেই রূপে জানে সেই তাহা কহে।
- সকল সম্ভবে কৃষ্ণে কিছু মিথ্যা নহে।।
(১) সনকাদি - সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার।
(২) উপাধান - বালিস।
(৩) আরাম - উপবন (বাগান)।
(৪) 'শেষতা' - নির্ম্মাল্য, প্রসাদ (অথবা শেষত্ব অর্থাৎ উপকারিত্ব)।
(৫) 'কাহো' - কোনরূপ।
- অতএব শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য গোঁসাঞি।
- সর্ব্ব-অবতার লীলা করি সবারে দেখাই।।
- এইরূপে নিত্যানন্দ অনন্ত প্রকাশ (৬)।
- সেইভাবে কহে মুঞি চৈতন্যের দাস (৭)।।
- কভু গুরু কভু সখা কভু ভৃত্যলীলা।
- পূর্ব্বে যেন তিন ভাবে (৮) ব্রজে কৈল খেলা।।
- বৃষ হঞা কৃষ্ণ-সনে মাথামাথি রণ।
- কভু কৃষ্ণ করে তাঁর পাদ-সংবাহন।।
- আপনাকে ভৃত্য করি 'কৃষ্ণ প্রভু' জানে।
- কৃষ্ণের কলার কলা আপনাকে মানে।।
(৬) 'অনন্ত প্রকাশ' - অনন্তের অবতার।
(৭) সেইভাবে - অনন্ত ভাবে। মুঞি - আমি (নিত্যানন্দ)। নিত্যানন্দ - অনন্তদেব মিলিত থাকায় তদ্ভাবে তিনি আপনাকে শ্রীচৈতন্যদাস বলেন।
(৮) 'তিন ভাবে' - গুরু, সখা ও ভৃত্যভাবে।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।১১।৪০)
- বৃষায়মাণৌ নর্দ্দন্তৌ যুযুধাতে পরস্পরম্।
- অনুকৃত্য রুতৈর্জন্তূংশ্চেরতুঃ প্রাকৃতৌ যথা।।১৭
অন্বয়ঃ।- বৃষায়মাণৌ নর্দ্দন্তৌ (তাঁহারা বৃষ সাজিয়া নিনাদ করিতে করিতে) পরস্পরং যুযুধাতে (পরস্পরের সহিত যুদ্ধ করিতেন)। রুতৈঃ জন্তূন্ অনুকৃত্য প্রাকৃতৌ যথা 'তথা' চেরতুঃ (এবং শব্দ দ্বারা জন্তুগণের অনুকরণপূর্ব্বক প্রাকৃত বালকের ন্যায় বিচরণ করিতেন)।
অনুবাদ।- প্রাকৃত জনের মতই চলতেন তাঁরা - বৃষের অনুকরণে গর্জ্জন করতে করতে যুদ্ধও করতেন, আরা নানা পশুপাখীর ডাকেরও অনুকরণ করতেন।।১৭।।
- তত্রৈব - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।১৫।১৪)
- ক্কচিৎ ক্রীড়া-পরিশ্রান্তং গোপোৎসঙ্গোপবর্হণম্।
- স্বয়ং বিশ্রাময়ত্যার্য্যং পাদসংবাহনাদিভিঃ।।১৮
অন্বয়ঃ।- [শ্রীশুকদেব পরীক্ষিৎকে কহিলেন] ক্কচিৎ স্বয়ং ক্রীড়া-পরিশ্রান্তং গোপোৎসঙ্গোপবর্হণং (কোনও সময়ে ক্রীড়ায় পরিশ্রান্ত হইয়া গোপশিশুর ক্রোড়ে মস্তক রাখিয়া শায়িত) আর্য্যম্ (আর্য্যকে অর্থাৎ অগ্রজকে) পাদসংবাহনাদিভিঃ বিশ্রাময়তি (চরণ-সংবাহনাদির দ্বারা তাঁহাকে বিশ্রাম করান)।
অনুবাদ।- কখনো বা কেলায় ক্লান্ত হ'য়ে গোপের কোলে মাথা রেখে বলদেব শুতেন আর কৃষ্ণ স্বয়ং পদসেবা ক'রে ক্লান্তি দূর করতেন।।১৮।।
- তত্রৈব - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।১৩।২৭)
- কেয়ং বা কুত আয়াতা দৈবী বা নার্য্যুতাসুরী।
- প্রায়ো মায়াস্তু মে ভর্ত্তুর্ন্নান্যা মেহপি বিমোহিনী।।১৯
অন্বয়ঃ।- ইয়ং মায়া কা, কুতঃ বা আয়াতা, দৈবী বা নারী (ইনি কে? কোথা হইতেই বা আসিলেন? ইনি কি দেবসম্ভূতা না নরসম্ভূতা?) উত আসুরী (অথবা ইনি আসুরী মায়াই বা হইবেন)। দে ভর্ত্তু মায়া প্রায়ঃ অস্তু, অন্যা মে অপি বিমোহিনী ন (না ইনি আমার ভর্ত্তা শ্রীকৃষ্ণেরই মায়া, অন্য কেহ হইলে আমাকে মোহিত করিতে পারিত না)।
অনুবাদ।- ইনি কে? কোথা থেকেই বা এলেন? ইনি কি দেবতা, মানুষ বা অসুরসম্ভূতা মায়া? মনে হয়, আমার প্রভুরই মায়া, অন্যথায় আমার মোহ হত না।
- তত্রৈব - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।৬৮।৩)
- যস্যাঙ্ঘ্রি-পঙ্কজরজোহখিললোকপালৈ-
- র্মৌল্যুত্তমৈর্ধৃতমুপাসিততীর্থতীর্থম্।
- ব্রহ্মা ভবোহহমপি যস্য কলাঃ কলায়াঃ
- শ্রীশ্চোদ্বহেম চিরমস্য নৃপাসনং ক্ক।।২০
অন্বয়ঃ।- অখিললোকপালৈঃ র্মৌল্যুত্তমৈঃ ধৃতম্ (কিরীটশোভিত সর্ব্বলোকপাল কর্ত্তৃক ধৃত) উপাসিততীর্থতীর্থম্ অঙ্ঘ্রিপঙ্কজরজো যস্য (তীর্থোপাসকেরও তীর্থস্বরূপ যাঁহার পদকমলরেণু) যস্য কলায়াঃ কলাঃ ব্রহ্মা ভব অহমপি শ্রীশ্চ চিরম উদ্বহেম (যাঁহার কলারও কলা, ব্রহ্মা, ভব - এমন কি আমি এবং লক্ষ্মীও চিরকাল বহন করি) অস্য নৃপাসনং ক্ক (তাঁহার নিকট নৃপাসন কি?)।
অনুবাদ।- তাঁর কাছে রাজসিংহাসন আর কি? নিখিল লোকপালের মাথার মুকুটে তাঁরই পদকমলের রেণু, যে রেণু তীর্থঙ্কর মুনিদেরও তীর্থস্বরূপ। তাঁর অংশেরও অংশ মাত্র ব্রহ্মা, শিব, আমি ও লক্ষ্মীও সেই পদরেণুই নিত্য বহন করি।।২০।।
- একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য।
- যারে যৈছে নাচায় সে তৈছে করে নৃত্য।।
- এই মত চৈতন্য গোঁসাঞি একলে ঈশ্বর।
- আর সব পারিষদ কেহ বা কিঙ্কর (১)।।
- গুরুবর্গ নিত্যানন্দ অদ্বৈত-আচার্য্য।
- শ্রীবাসাদি আর যত লঘু-সম-আর্য্য (২)।।
- সভে পারিষদ সভে লীলায় সহায়।
- সভা লঞা নিজ কার্য্য সাধে গৌররায়।।
- অদ্বৈত-আচার্য্য গোঁসাঞি সাক্ষাৎ ঈশ্বর।
- প্রভু গুরু করি মানে - তেহোঁত কিঙ্কর।।
- আচার্য্য-গোঁসাঞির তত্ত্ব না যায় কথন।
- কৃষ্ণ অবতারি (৩) যেহোঁ তারিল ভুবন।।
- নিত্যানন্দ-স্বরূপ (৪) পূর্ব্বে হইলা লক্ষ্মণ।
- লঘুভ্রাতা (৫) হৈয়া করেন রামের সেবন।।
- রামের চরিত্র সব দুঃখের কারণ।
- স্বতন্ত্র লীলার দুঃখ সহেন লক্ষ্মণ।।
(১) 'পারিষদ' - লীলার অন্তরঙ্গ সাহায্যকারী।
(২) 'লঘু-সম-আর্য্য' - শ্রীনিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য এবং শ্রীনিবাস ভিন্ন কেহ লঘু অর্থাৎ কনিষ্ঠ, কেহ সব অর্থাৎ সদৃশ, কেহ আর্য্য অর্থাৎ মাননীয়।
(৩) 'অবতারি' - আরাধনা দ্বারা পৃথিবীতে অবতীর্ণ করাইয়া।
(৪) 'নিত্যানন্দ-স্বরূপ' - যাঁহারা সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়াছেন, অথচ যোগপট্ট অর্থাৎ দশনামী সম্প্রদায়ের গিরিপুরীভারতী আদি উপাধি গ্রহণ করেন নাই, তাঁহাদিগকে স্বরূপ কহে। শ্রীমহাপ্রভুর গণে দুই স্বরূপ - শ্রীনিত্যানন্দ স্বরূপ আর শ্রীদামোদর স্বরূপ।
(৫) 'লঘুভ্রাতা' - কনিষ্ঠ ভ্রাতা।
- নিষেধ করিতে নারে যাতে (১) ছোট ভাই।
- মৌন করি রহে লক্ষ্মণ মনে দুঃখ পাই।।
- কৃষ্ণাবতারে জ্যেষ্ঠ হৈল সেবার কারণ।
- কৃষ্ণকে করাইল নানা-সুখ আস্বাদন।।
- রাম-লক্ষ্মণ কৃষ্ণ-রামের অংশ বিশেষ।
- অবতার-কালে দোহেঁ দোঁহাতে প্রবেশ (২)।।
- সেই অংশ লঞা জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠাভিমান।
- অংশাংশী রূপে শাস্ত্র করয়ে ব্যাখ্যান।।
(১) 'যাতে' - যেহেতু।
(২) 'অবতার কালে' - শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীবলদেব অবতারকালে। দোহেঁ দোঁহাতে - শ্রীরামচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণে আর শ্রীলক্ষ্মণ শ্রীবলদেবে প্রবিষ্ট হন।
- তথাহি - ব্রহ্মসংহিতায়াং (৫।৩৯)
- রামাদিমূর্ত্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠ-
- ন্নানাবতারমকরোদ্ভুবনেষু কিন্তু।
- কৃষ্ণঃ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমান্ যো
- গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।২১
অন্বয়ঃ।- যঃ পরমঃ পুমান্ কৃষ্ণঃ রামাদিমূর্ত্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠন (যিনি রামাদি মূর্ত্তিসমূহে কলারূপে অবস্থানপূর্ব্বক) ভূবনেষু নানাবতারমকরোৎ (জগতে নানা অবতার করিয়াছিলেন) কিন্তু (অপিচ) যঃ স্বয়ং সমভবৎ (যিনি নিজে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণরূপে পূর্ণরূপে আবির্ভূত হইয়াছেন) তম্ আদিপুরুষং গোবিন্দম্ অহং ভজামি (আমি সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি)।
অনুবাদ।- আদিপুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি। তিনিই পরম পুরুষ যিনি স্বয়ং কৃষ্ণরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং নিজের অংশে রামাদি নানা অবতারের অবতারণা করেছেন।।২১।।
- শ্রীচৈতন্য সেই কৃষ্ণ নিত্যানন্দ রাম (৩)।
- নিত্যানন্দ পূর্ণ করে চৈতন্যের কাম (৪)।।
- নিত্যানন্দ-মহিমা-সিন্ধু অনন্ত অপার।
- এক কণ স্পর্শি মাত্র সে কৃপা তাঁহার।।
(৩) 'রাম' - অর্থাৎ বলরাম।
(৪) 'কাম' - কামনা।
- আর এক শুন তাঁর কৃপার মহিমা।
- অধম জীবেরে চঢ়াইল ঊর্দ্ধসীমা।।
- বেদগুহ্য (৫) কথা এই অযোগ্য কহিতে।
- তথাপি কহিয়ে তাঁর কৃপা প্রকাশিতে।।
- উল্লাসের বলে (৬) লেখোঁ তোমার প্রসাদ।
- নিত্যানন্দ প্রভু মোর ক্ষম অপরাধ (৭)।।
- অবধূত গোঁসাঞির এক ভৃত্য প্রেমধাম।
- মীনকেতন রামদাস হয় তার নাম (৮)।।
- আমার আলয়ে অহোরাত্র সংকীত্র্তন।
- তাহাতে আইলা তিঁহো পাঞা নিমন্ত্রণ।।
- মহা প্রেমময় তেহোঁ বসিলা অঙ্গনে।
- সকল বৈষ্ণব তাঁর বন্দিল চরণে।।
- নমস্কার করিতে কারো উপরেতে চঢ়ে।
- প্রেমে কারে বংশী মারে কাহারে চাপড়ে।।
- যে নেত্রে দেখিতে অশ্রু মনে হয় যার।
- সেই নেত্রে অবিচ্ছিন্ন বহে অশ্রুধার (৯)।।
- কভু কোন অঙ্গে দেখি পুলক-কদম্ব (১০)।
- এক অঙ্গে জাড্য (১১) তাঁর আর অঙ্গে কম্প।।
- নিত্যানন্দ বলি যবে করেন হুঙ্কার।
- তাহা দেখি লোকের হয় মহা চমৎকার।।
(৫) 'বেদগুহ্য' - দেবতারা স্বপ্নাবস্থায় জাগ্রদবস্থায় সাক্ষাৎ হইয়া যাহা বলেন, তাহাকে বেদগুহ্য বলে।
(৬) 'উল্লাস উপরি' - আনন্দবশে।
(৭) 'ক্ষম অপরাধ' - গুহ্যকথা প্রকাশে অপরাধ, তাহা ক্ষমা কর।
(৮) অবধূত শ্রীনিত্যানন্দের রামদাস মীনকেতন নামে এক ভৃত্য ছিল।
(৯) মীনকেতন রামদাসের যে চক্ষুতে অশ্রু দেখিতে যাহার (যে ব্যক্তির অর্থাৎ কোন লোকের মনে হয়, অমনি তাঁহার সেই চক্ষুতে অবিচ্ছিন্ন (সর্ব্বদা) অশ্রু বহে।
(১০) 'কদম্ব' - সমূহ।
(১১) 'জাড্য' - জড়তা।
- গুণার্ণব মিশ্র নামে এক বিপ্র আর্য্য।
- শ্রীমূর্ত্তি নিকটে তেঁহো (১) করে সেবাকার্য্য।।
- অঙ্গনে আসিয়া তেঁহো না কৈল সম্ভাষ।
- তাহা দেখি ক্রুদ্ধ হঞা বোলে রামদাস।।
- এইত দ্বিতীয় সূত রোমহর্ষণ।
- বলদেবে দেখি যে না কৈল প্রত্যুদ্গম (২)।।
- এত বলি নাচে গায় করয়ে সন্তোষ।
- কৃষ্ণকার্য্য করে বিপ্র না করিলে রোষ।।
- উৎসবান্তে গেলা তেঁহো করিয়া প্রসাদ।
- মোর ভ্রাতা সনে তাঁর কিছু হৈল বাদ।।
- চৈতন্য গোঁসাঞিতে তাঁর সুদৃঢ় বিশ্বাস।
- নিত্যানন্দ প্রতি তাঁর বিশ্বাস-আভাস (৩)।।
- ইহা শুনি রামদাসের দুঃখ হৈল মনে।
- তবেত ভ্রাতারে আমি করিনু ভর্ৎসনে।।
- দুই ভাই এক তনু সমান-প্রকাশ।
- নিত্যানন্দ না মান তোমার হবে সর্ব্বনাশ।।
- একেতে বিশ্বাস অন্যে না কর সম্মান।
- অর্দ্ধ-কুক্কুটী-ন্যায় তোমার প্রমাণ (৪)।।
- কিম্বা (৫) দোঁহা না মানিয়া হওত পাষণ্ড।
- একে মানি আরে না মানি এই মত ভণ্ড।।
(১) 'শ্রীমূর্ত্তি' - শ্রীরাধামদনমোহন মূর্ত্তি।
(২) যেমন পুরাণবক্তা রোমহর্ষণ নাম সূত বলদেবকে দর্শন করিয়া গাত্রোত্থান করেন নাই, তদ্রুপ এই গুণার্ণবও আমাকে (রামদাসকে) দেখিয়া গাত্রোত্থান না করায় এ ব্যক্তি দ্বিতীয় সূত। 'প্রত্যুদ্গম' - আগত ব্যক্তির সম্মানার্থ তদুদ্দেশে অগ্রে গমন।
(৩) 'বিশ্বাস-আভাস' - সন্দেহ।
(৪) অর্দ্ধ-কুক্কুটী-ন্যায়' - কুক্কুটী পশ্চাদ্ভাগে ডিম্ব প্রসব করে দেখিয়া এক গৃহস্থ কুক্কুটীকে কাটিয়া তাহার পূর্ব্বার্দ্ধ ভক্ষণ করিল এবং পশ্চার্দ্ধ রাখিয়া দিল। কিন্তু ঐ পশ্চার্দ্ধ আর ডিম্ব প্রসব করিল না। সেইরূপ শ্রীনিত্যানন্দকে অনাদর করিয়া শুধু শ্রীচৈতন্যদেবে বিশ্বাস স্থাপন করিলে কোন ফল লাভ হইবে না।
(৫) 'কিম্বা' - বরং।
- ক্রুদ্ধ হৈয়া বংশী ভাঙ্গি চলে রামদাস।
- তৎকালে আমার ভ্রাতার হৈল সর্ব্বনাশ (৬)।।
- এই ত কহিল তাঁর সেবক-প্রভাব।
- আর এক কহি তাঁর দয়ার স্বভাব।।
- ভাইকে ভৎসিনু মুঞি লঞা এই গুণ।
- সেই রাত্রে প্রভু মোরে দিলা দরশন।।
- নৈহাটি নিকটে ঝামটপুর নামে গ্রাম।
- তাঁহা স্বপ্নে দেখা দিলা নিত্যানন্দ রাম।।
- দণ্ডবৎ হৈয়া আমি পড়িনু পায়েতে।
- নিজ-পাদপদ্ম প্রভু দিলা মোর মাথে।।
- উঠ উঠ বলি মোরে বোলে বার বার।
- উঠি তাঁর রূপ দেখি হৈনু চমৎকার।।
- শ্যাম-চিক্কণ কান্তি প্রকাণ্ড শরীর।
- সাক্ষাৎ কন্দর্প যৈছে মহাম্ল্ল বীর।।
- সুবলিত হস্ত পদ কমল নয়ান।
- পট্ট-বস্ত্র শিরে পট্ট-বস্ত্র পরিধান।।
- সুবর্ণ-কুণ্ডল কর্ণে স্বর্ণাঙ্গদ বালা।
- পায়েতে নূপুর বাজে কণ্ঠে পুষ্পমালা।।
- চন্দন-লেপিত অঙ্গ তিলক সুঠাম।
- মত্ত গজ জিনি মদমন্থর পয়ান (৭)।।
- কোটি চন্দ্র জিনি মুখ উজ্জ্বল বরণ।
- দাড়িম্ব-বীজ-সম দন্ত তাম্বুল-চর্ব্বণ।।
- প্রেমে মত্ত অঙ্গ ডাহিনে বামে দোলে।
- কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিয়া গম্ভীর বোল বোলে।।
- রাঙ্গা-যষ্টি হস্তে দোলে যেন মত্ত-সিংহ।
- চারি-পাশে বেড়ি আছে চরণেতে ভৃঙ্গ।।
- পারিষদগণে দেখি সব গোপ বেশ।
- কৃষ্ণ কৃষ্ণ কহে সবে সপ্রেম-আবেশ।।
- শিঙ্গা বাঁশী বাজায় কেহো, কেহো নাচে গায়।
- সেবক যোগায় তাম্বুল চামর ঢুলায়।।
(৬) 'সর্ব্বনাশ' - (সম্ভবতঃ) মহাপ্রভুতে যে সুদৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তাহার লোপ।
(৭) 'মদমন্থর পয়ান' - প্রেমমদে অলস গমন।
- নিত্যানন্দ স্বরূপে দেখিয়া বৈভব।
- কিবা রূপ গুণ লীলা অলৌকিক সব।।
- আনন্দে বিহ্বল আমি কিছুই না জানি।
- তবে হাসি প্রভু মোরে কহিলেন বাণী।।
- "অয়ে অয়ে কৃষ্ণদাস না কর ত ভয়।
- বৃন্দাবনে যাহ তাঁহা সর্ব্ব লভ্য হয়।।"
- এত বলি প্রেরিলা মোরে হাতসানি (১) দিয়া।
- অন্তর্দ্ধান কৈলা প্রভু নিজগণ লঞা।।
- মূর্চ্ছিত হইয়া মুঞি পড়িনু ভূমিতে।
- স্বপ্নভঙ্গ হৈলে দেখি হঞাছে প্রভাতে।।
- কি দেখিনু কি শুনিনু করিয়ে বিচার।
- প্রভু আজ্ঞা হৈল বৃন্দাবন যাইবার।।
- সেইক্ষণে বৃন্দাবনে করিনু গমন।
- প্রভুর কৃপাতে সুখে আইনু বৃন্দাবন।।
- জয় জয় নিত্যানন্দ নিত্যানন্দ রাম।
- যাঁহার কৃপাতে পাইনু বৃন্দাবন ধাম।।
- জয় জয় নিত্যানন্দ জয় কৃপাময়।
- যাঁহা হৈতে পাইনু রূপ-সনাতনাশ্রয়।।
- যাঁহা হৈতে পাইনু রঘুনাথ মহাশয়।
- যাঁহা হইতে পাইনু শ্রীস্বরূপ-আশ্রয়।।
- সনাতন-কৃপায় পাইনু ভক্তির সিদ্ধান্ত।
- শ্রীরূপ-কৃপায় পাইনু ভক্তি-রসপ্রান্ত (২)।।
- জয় জয় নিত্যানন্দ চরণারবিন্দ।
- যাঁহা হইতে পাইলাম শ্রীরাধাগোবিন্দ।।
- জগাই মাধাই হৈতে মুঞি সে পাপিষ্ঠ।
- পুরীষের কীট হইতে মুঞি সে লঘিষ্ঠ (৩)।।
- মোর নাম শুনে যেই তার পুণ্যক্ষয়।
- মোর নাম লয়ে যেই তার পাপ হয়।।
(১) 'হাতসানি' - হস্তদ্বারা ইসারা।
(২) 'ভক্তি-রস প্রান্ত' - ভক্তিরসের চরমসীমা, অর্থাৎ উজ্জ্বল রসময়ী ভক্তি।
(৩) 'পুরীষের' - বিষ্ঠার। 'লঘিষ্ঠ' - নীচ, অপকৃষ্ট।
- এমন নির্ঘৃণ মোরে কেবা কৃপা করে।
- এক নিত্যানন্দ বিনু জগৎ-ভিতরে।।
- প্রেমে মত্ত নিত্যানন্দ কৃপা অবতার।
- উত্তম অধম কিছু না করে বিচার।।
- যে আগে পড়য়ে (৪) তারে করয়ে নিস্তার।
- অতএব নিস্তারিলা মো-হেন দুরাচার।।
- মো-পাপিষ্ঠে আনিলেন শ্রীবৃন্দাবন।
- মো-হেন (৫) অধমে দিলা শ্রীরূপচরণ।।
- শ্রীমদন গোপাল শ্রীগোবিন্দ (৬) দরশন।
- কহিবার যোগ্য নহে এ সব কথন।।
- বৃন্দাবন-পুরন্দর মদনগোপাল।
- রাসবিলাসী সাক্ষাৎ ব্রজেন্দ্রকুমার।।
- শ্রীরাধা-ললিতা সঙ্গে রাস-বিলাস।
- মন্মথ-মন্মথ রূপে যাঁহার প্রকাশ।।
(৪) যে ব্যক্তি তাঁহার শ্রীচরণ আশ্রয় করে।
(৫) 'মো-হেন' - আমার ন্যায়।
(৬) শ্রীমদনমোহন ও শ্রীগোবিন্দ এই দুইটি শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমূর্ত্তি।
- তথাহি - শ্রীমদ্ভাগবতে (১০।৩২।২)
- তাসামাবিরুভূচ্ছৌরিঃ স্ময়মানমুখাম্বুজঃ।
- পীতাম্বরধরঃ স্রগ্বী সাক্ষান্মন্মথমন্মথঃ।। ২২
অন্বয়ঃ।- [শুকদেব পরীক্ষিৎকে বলিতেছেন] স্ময়মানমুখাম্বুজঃ (প্রফুল্লবদনকমল) পীতাম্বরধরঃ (পীতাম্বরপরিহিত) স্রগ্বী (মাল্যধারী) সাক্ষান্মন্মথমন্মথঃ (সাক্ষাৎ মদনেরও মনোহারী) শৌরিঃ (শ্রীকৃষ্ণ) তাসাম্ আবিরভূৎ (তাঁহাদিগের অর্থাৎ গোপীদিগের নিকটে আবির্ভূত হইলেন)।
অনুবাদ।- তাদের মধ্যে আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ, মদনেরও মনোহররূপে - তাঁর মুখকমলে মৃদু হাসি, অঙ্গে পীত বসন, গলায় বনমালা।।২২।।
- স্বমাধুর্য্যে লোকের মন করে আকর্ষণ।
- দুই পার্শ্বে রাধা ললিতা করেন সেবন।।
- নিত্যানন্দদয়া মোরে তারেঁ দেখাইল।
- শ্রীরাধামদনমোহনে প্রভু করি দিল।।
- মো অধমে দিল শ্রীগোবিন্দদরশন।
- কহিবার কথা নহে অকথ্য কথন।।
- বৃন্দাবনে যোগপীঠকল্পতরু-বনে।
- রত্ন-মণ্ডপ তাহে রত্নসিংহাসনে।।
- শ্রীগোবিন্দ বসি আছেন ব্রজেন্দ্রনন্দন।
- মাধুর্য্য প্রকাশি করেন জগৎ মোহন।।
- বাম পার্শ্বে শ্রীরাধিকা সখীগণ-সঙ্গে।
- রাসাদিক-লীলা প্রভু করে কত রঙ্গে।।
- যাঁর ধ্যান নিজলোকে (১) করে পদ্মাসন (২)।
- অষ্টাদশাক্ষর-মন্ত্রে করে উপাসন।।
- চৌদ্দ-ভুবনে যাঁর সবে করে ধ্যান।
- বৈকুণ্ঠাদি-পুরে যাঁর লীলা গুণ-গান।।
- যাঁর মাধুরীতে করে লক্ষ্মী-আকর্ষণ।
- রূপ গোঁসাঞি করিয়াছেন সে রূপ বর্ণন।।
(১) 'নিজলোকে' - সত্যলোকে।
(২) 'পদ্মাসন' - ব্রহ্মা।
- তথাহি - ভক্তিরসামৃত সিন্ধৌসাধনভক্তিলহর্য্যাম্ পূর্ব্ববিভাগে (২।১১১)
- স্মেরাং ভঙ্গীত্রয়পরিচিতাং
- সাচিবিস্তীর্ণদৃষ্টিং
- বংশীন্যস্তাধরকিশলয়া-
- মুজ্জ্বলাং চন্দ্রকেণ।
- গোবিন্দখ্যাং হরিতনুমিতঃ
- কেশি-তীর্থোপকণ্ঠে
- মা প্রেক্ষিষ্ঠাস্তব যদি সখে
- বন্ধুসঙ্গেহস্তি রঙ্গঃ।।২৩
অন্বয়ঃ।- হে সখে! যদি বন্ধুসঙ্গে রঙ্গঃ অস্তি (হে সখে! যদি বন্ধুগণের সঙ্গলাভে তোমার আসক্তি থাকে) 'তহি' কেশিতীর্থোপকণ্ঠে (তবে কেশিতীর্থের উপকণ্ঠে) স্মেরাম্ ভঙ্গীত্রয়পরিচিতাং (ঈষদ্ধাস্যযুক্ত ত্রিভঙ্গিভঙ্গিমময়ী) বংশীন্যস্তাধরকিশলয়াম্ (অধর-পল্লবে বংশীধারিণী) সাচিবিস্তীর্ণদৃষ্টিং (বঙ্কিম কটাক্ষশালিনী) চন্দ্রকেণ উজ্জ্বলাং হরিতনুৎ মা প্রেক্ষিষ্ঠাঃ (ময়ূরপুচ্ছশোভিতা গোবিন্দাখ্য শ্রীকৃষ্ণের মূর্ত্তি দেখিও না)।
অনুবাদ।- যদি স্বজনসুখ চাও - বন্ধু! কৃষ্ণকে তবে দেখো না। কেশিতীর্থের উপকণ্ঠে আছেন সেই শ্যামতনু গোবিন্দ। তাঁর মুখে মৃদু হাসি, ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা, অপাঙ্গে বঙ্কিম চাহনি, অধর-কিশলয়ে বেণু ও চূড়ায় ময়ূরকলাপ।।২৩।।
- সাক্ষাৎ ব্রজেন্দ্র-সুত ইথে নাহি আন।
- যেবা অজ্ঞে করে তাঁরি প্রতিমাদি জ্ঞান।।
- সেই অপরাধে তার নাহিক নিস্তার।
- ঘোর নরকেতে পড়ে কি বলিব আর।।
- হেন যে গোবিন্দ প্রভু পাইনু যাঁহা হৈতে।
- তাঁহার চরণ কৃপা কে পারে বর্ণিতে।।
- বৃন্দাবনে বৈসে যত বৈষ্ণব-মণ্ডল।
- কৃষ্ণনাম-পরায়ণ পরম মঙ্গল।।
- যার প্রাণধন নিত্যানন্দ-শ্রীচৈতন্য।
- রাধাকৃষ্ণ-ভক্তি বিনে নাহি জানে অন্য।।
- সে বৈষ্ণবের পদরেণু তার পদছায়া (৩)।
- মো-অধমে দিল নিত্যানন্দ করি দয়া।।
- "তাঁহা সর্ব্ব লভ্য হয়" প্রভুর বচন।
- সেই সূত্র এই তার কৈল বিবরণ।।
- সে সব পাইনু আমি বৃন্দাবন আয় (৪)।
- সেই সব লভ্য এই প্রভুর অভিপ্রায়।।
- আপনার কথা লিখি নির্লজ্জ হইয়া।
- নিত্যানন্দ-গুণে লেখায় উন্মত্ত করিয়া।।
- নিত্যানন্দ-প্রভুর গুণ-মহিমা অপার।
- সহস্র-বদনে শেষ নাহি পায় পার।।
- শ্রীরূপ রঘুনাথ পদে যার আশ।
- চৈতন্যচরিতামৃত কহে কৃষ্ণদাস।।
(৩) 'পদছায়া' - চরণাশ্রয়।
(৪) 'আয়' - আসিয়া।
ইতি শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে আদিলীলায়াং শ্রীনিত্যানন্দতত্ত্বনিরূপণং নাম পঞ্চমঃ পরিচ্ছেদঃ।